বিশেষ প্রতিনিধি ।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে কিছু নাম রয়েছে, যারা প্রচারের আলোয় না থেকেও নেপথ্যে বড় বড় ঘটনা সংগঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। সেই তালিকার শীর্ষে আসীন হতে পারেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। যিনি নিজের ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক শুদ্ধতা ও সংগঠকসুলভ মনোভাব দিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে ক্রমেই আলোচিত নাম হয়ে উঠছেন।
এনসিপির রাজনীতিতে বহু নেতাকর্মী নানা সময় বিতর্কে জড়ালেও এখন পর্যন্ত আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ বা বিতর্ক নেই। বরং যাঁরা এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সমালোচনাও করেন, তাঁরাও আখতার হোসেনের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধাশীল।
এনসিপির বিভিন্ন নেতাদের গাড়ি বহর কিংবা বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে যখন নানান আলোচনা সমালোচনা তখন ভ্যান নিয়ে জনসংযোগ ও পথসভা করছেন রংপুরের সন্তান আখতার হোসেন।
তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সর্বপ্রথম পরিচিতি পান তিনি।
এরপর ডাকসুতে সমাজসেবা সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসেন তিনি। পরে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণধিকার পরিষদে যুক্ত হন। যদিও মতানৈক্য ও নীতিগত দ্বন্দ্বের কারণে তিনি ভিপি নুরের দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
এরপর তিনি নিজের রাজনৈতিক সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তৈরি করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি। আর এই ছাত্র সংগঠনের সাথেই যুক্ত ছিল জুলাই আগস্টের নায়কেরা৷
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলন, যা দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করে। এই আন্দোলনে সশরীরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আখতার হোসেন।
অনেকেই মনে করেন, আখতার হোসেন যদি দলটির শীর্ষ (১ নম্বর) পদে থাকতেন, তবে দলটির ফলাফল আরও ইতিবাচক হতো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার চিন্তা-দর্শন, নেতৃত্বগুণ এবং সংগঠনের প্রতি আনুগত্য এনসিপিকে আরও সংগঠিত ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারত।
তবে নানান সূত্র বলছে, দলের ভেতরে একটি গোষ্ঠী তাকে ‘মাইনাস’ করার ছক কষেছিল।
বর্তমানে এনসিপির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আখতার হোসেনকে নিয়ে দলের তরুণ অংশ এবং কিছু অভিজ্ঞ নেতাদের মধ্যে রয়েছে বড় আশা। তাদের মতে, তাকে যদি সঠিকভাবে প্রস্তুত ও পরিচালনা করা হয়, তাহলে তিনি জাতীয় রাজনীতির এক সম্ভাবনাময় ‘তারকা’ হয়ে উঠবেন।
রাজনৈতিক শুদ্ধতার সংকটে ভোগা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আখতার হোসেনের মতো নেতার উত্থান একটি ইতিবাচক বার্তা হতে পারে রাজনীতি এবং সমাজের জন্য—একজন যিনি প্রচারের বাহুল্যে না গিয়েও পরিবর্তনের জন্য নিবেদিত থাকেন।