২০ জুলাই সারজিসকে সমন্বয়কের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় : নেত্র নিউজকে নাহিদ

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:২০ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:২০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

সম্প্রতি একটি টকশোতে অংশ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন সারজিস আলম । আর এতে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সারজিস আলমকে অব্যাহতি দেওয়ার যেই খবর বেরিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সত্যতা মিলেছে নেত্র নিউজের একটি সংবাদ। ফলে পুরোনো সংবাদের লিংকটিও হঠাৎ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

গত বছর জুলাইয়ে যখন আন্দোলন তুঙ্গে তখন ২০ জুলাই , “ নাহিদ ইসলাম ও নুরুল হক নুর আটক ” এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিল তাসনীম খলিল সম্পাদিত নেত্র নিউজ । 


সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিকে আটক হওয়ার কিছুক্ষণ আগে নাহিদ ইসলাম নেত্র নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে সারজিস আলমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারজিস আলমসহ তিন জন ছাত্র একটি সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আট দফা দাবি উপস্থাপন করেছিলেন।


নেত্র নিউজকে দেওয়া সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম “সকল খুনের বিচারের দাবিতে দেশবাসীকে আন্দোলন অব্যাহত রাখার” আহ্বান জানিয়েছেন। “আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।”

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমকে বাংলাদেশের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকার জন্যও তিনি আহবান জানান।


সম্প্রতি, এই সংবাদটি ফিরোজ আহমেদ নামে একজন তার ফেসবুকে শেয়ার দিলে সেখানে একজন কমেন্টে বলেন, “ সার্জিসকে অনেকেই সাবেক ছাত্রলীগার হওয়ার অবিশ্বাস শুরু করে। পরে ৬ জনের সাথে গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় এটা ধামাচাপা পরে যায়। ”


এদিকে, ২৩ জুলাই সমকালে “ চার সমন্বয়কের খোঁজ পেতে আলটিমেটাম ” এই শিরোনামের একটি সংবাদে জানানো হয়, প্রশ্ন উঠেছে, কোটা আন্দোলনকারীরা এক আছেন কিনা। একপক্ষ বলছে, দেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়নযোগ্য দাবিই তারা পেশ করেছে। অন্যপক্ষের দাবি, সরকার কয়েকজন আন্দোলনকারীকে জোর করে তাদের দাবি পরিবর্তন করিয়েছে। 


সরকারের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারী দলের অন্যতম সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম সমকালকে বলেন, আলটিমেটাম শেষে আমরা আগামীকাল (আজ) সবার সঙ্গে বসব। সবাই আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। কখন এবং কোথায় তারা কর্মসূচি জানাবেন– এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা এখনই জানাতে চাচ্ছি না। কেননা আমাদের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। ৮ ও ৯ দফার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই মনে করছেন যে, তারা আন্দোলন করে বিপ্লব আনবেন। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, কোটা সংস্কার করা এবং যারা আন্দোলনে মারা গেছেন, তাদের হত্যার বিচার নিশ্চিত করা। আমাদের উদ্দেশ্য গণঅভ্যুত্থান ঘটানো নয়। যেসব দাবি আদায় করতে পারব, আমরা সেগুলোই দিয়েছি।

এটাকে যদি কেউ সমঝোতা বলেন, তাহলে আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছি। তারা যেন সেসব দাবি আদায় করে নেন।  ৫৯ জন সমন্বয়ক এবং সহসমন্বয়কের বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরাও এই ৫৯ জনের নাম দেখতে চাই। আবদুল কাদেরের নামে বিবৃতি এসেছে। আমাদের তো ৬৫ জন সমন্বয়ক। ৬৫ জনের মধ্যে যে পাঁচজনের অন্য উদ্দেশ্য ছিল না, সেটা আমরা বলতে পারছি না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম সরকারের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বসার বিষয়ে বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসিনি। কেননা, এত মানুষের লাশের ওপর দিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে বসতে পারি না।

যেহেতু ইন্টারনেট বন্ধ, তাই আমরা আমাদের ৮ দফা দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে তাদের সঙ্গে বসেছি, কোনো সংলাপে বসিনি। আমাদের এই ৮ দফা দাবি পূরণ সাপেক্ষে আমরা সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসব কিনা– তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। সরকারের মন্ত্রীদের মাধ্যমে দাবি তুলে ধরা আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল। আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের বিভাজন নেই। আমরা সবাই এক আছি।

তাহলে তারা ৮ দফা, সমন্বয়কদের আরেকটি অংশ ৯ দফা কেন দিয়েছে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮ দফা এবং ৯ দফার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। কিছুটা ভাষাগত পার্থক্য হয়েছে। এই দাবির বিষয়ে আমরা সবাই একমত। ৫৯ জন সমন্বয়কের বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হয়তো কেউ তাদের ব্যক্তিগত অভিমত সবার নামে চালিয়েছেন। এই বিবৃতিতে কোন ৫৯ জন রয়েছেন, তা উল্লেখ নেই।

একটি নম্বর থেকে গণমাধ্যমে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি সমন্বিত বিবৃতি নয়। অন্যদিকে, ৫৯ জন সমন্বয়কারীর পক্ষে বিবৃতি দেওয়া সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এই পক্ষের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ৫৯ জনের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি পাঠানো হয়েছে, সেটাই আমাদের সবার বিবৃতি। 


তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সে সময় যারা ৯ দফাকে ৮ দফায় পরিণত করেছিল তাদের জনগন বেঈমান হিসেবেই সেসময় দেখেছিল। কিন্তু একদল সাহসী তরুন সেসময় ৯ দফার বিষয়ে অটল ছিল । খুব চাপে পড়লে শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ৮ দফাকে মেনে নিতেন । কিন্তু ৯ দফা মানতে চাইলে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ সাথে সাথে চলে যেত ।

 
কারণ ৯ দফার প্রথম দফাটিই ছিল প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চেতে হবে । আর ভুল স্বীকার করে শেখ হাসিনা ক্ষমা চাইলেই তার সেই পদে থাকা নিয়ে সাংবিধানিক ভাবে প্রশ্ন দেখা যেত । আর সেটিকেই সারজিস আলমরা সেসময় হতে দিতে চায় নি । কিন্তু অন্যরা এই বিষয়ে অটল ছিল ।