আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হবে?

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

দ্য পলিটিশিয়ান রিপোর্ট :

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনি প্রক্রিয়া এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো বড় দল নিষিদ্ধ করার ঘটনা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যার অভিযোগ এবং এর পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

আইনি প্রক্রিয়া: একটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারার অধীনে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। যদি কোনো দল সংবিধান বিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়, তবে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা থাকে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি: আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। দলটি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অতএব, দলটিকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব ব্যাপক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গণতান্ত্রিক চর্চা: বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে যে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রের বিপক্ষে যায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভুল-ত্রুটি সমাধানের মাধ্যম হলো নির্বাচন, নিষিদ্ধ করা নয়।

বিএনপি যা বলছে
কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিএনপি এককভাবে নিতে চায় না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত জনগণই নেবেন এবং রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা নির্ধারিত হওয়া উচিত।

২ ফেব্রুয়ারি(২০২৫) দৈনিক সমকালে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি চাইল আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেল, এটা তো ঠিক নয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত জনগণের হাতে থাকা উচিত। গোটা রাষ্ট্র মিলে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পার্লামেন্টে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটাই সবচেয়ে ভালো।”

তিনি আরও বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা আরেকটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে পারি না। যেমন আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তখন আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা বিশ্বাস করি, কোনো দল নিষিদ্ধ করতে হলে পার্লামেন্টে আলোচনা এবং জনগণের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে তা করা উচিত।”

ছাত্রদের অবস্থান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মতে, “গণহত্যার বিচারের পূর্বে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।” তারা আরও বলেন, “আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য যারা উদ্যোগ নেবে, তাদের ইতিহাস গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে।”

বিশেষজ্ঞদের অভিমত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক যোগাযোগবিষয়ক শিক্ষক ড. সাইমুম পারভেজ তাঁর লেখা এক কলামে বলেন, “আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি তার সাংস্কৃতিক মূলধন। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের অনেক মহারথী ও মতামত প্রভাবক আওয়ামী লীগের শক্তি। তাই দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম ছাড়া দলটিকে নিষিদ্ধ করলে তা কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”