বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কিছু দৃশ্য চিরস্থায়ী হয়ে থাকে। ২০১১ সালের ৬ জুলাইয়ের সকাল তেমনই একটি অধ্যায়, যা আজও স্মরণীয়। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে পুলিশের লাঠিপেটায় রক্তাক্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। সংসদ ভবনের সামনে পুলিশের হাতে এভাবে এক সংসদ সদস্যের আহত হওয়ার দৃশ্য সেদিন দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল।
সময় পেরিয়ে গেছে ১৩ বছর। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলেছে, তবে সেই ঘটনার স্মৃতি রয়ে গেছে। এবার সেই লাঠিপেটার ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামলেন ফারুক। গেল ১৯ আগস্ট(২০২৪) শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন তিনি। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন সেই সময়ের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ও বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ এবং তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এসি) ও বর্তমানে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। মামলায় আনা হয়েছে হত্যাচেষ্টা, গুরুতর আঘাত, অপরাধের তথ্য গোপন ও ষড়যন্ত্রসহ একাধিক অভিযোগ।
ফিরে দেখা ৬ জুলাই ২০১১
২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলে এর প্রতিবাদে বিএনপিসহ চার দলীয় জোট ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়। হরতালের প্রথম দিন সকাল থেকেই ঢাকায় যান চলাচল সীমিত ছিল, দূরপাল্লার বাস চলেনি। তবে ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
সকাল ৭টার দিকে ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে মিছিল বের করেন। পুলিশের বাধার মুখে মিছিল থেকে বাস লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। এরপরই পুলিশের সঙ্গে ফারুকের বিতর্ক হয় এবং অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর আহত হন ফারুক। তাঁকে মানিক মিয়া এভিনিউর ন্যাম ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে সংসদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে হারুন অর রশীদসহ দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন বলে তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
১৩ বছর পর কেন মামলা?
দীর্ঘদিন ধরে এই ঘটনার বিচার দাবি করে আসছিল বিএনপি। তবে ২০২৪ সালে এসে বিএনপির এই নেতা নিজেই মামলা করলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।
পুলিশের পাল্টা ব্যাখ্যা
২০১১ সালের সেই সময় পুলিশের বক্তব্য ছিল ভিন্ন। তৎকালীন এডিসি হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, মিছিল থেকে বাস লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ফারুক নিজেও ইট ছোড়েন বলে অভিযোগ ছিল। পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করে মিছিলকারীরা আগ্রাসী হলে সংঘর্ষ হয়।
সেই ঘটনার প্রভাব ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
সেই সময় এই লাঠিপেটার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যের ওপর প্রকাশ্যে পুলিশি হামলা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা হয়।
এখন, ১৩ বছর পর এই মামলা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, এই মামলা ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পথে একটি ধাপ। তবে সরকারি পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য আসেনি।
পরবর্তী সময়ে আদালতে মামলাটি কী মোড় নেয়, তা এখন রাজনৈতিক মহলের বিশেষ নজরে থাকবে।