ক্ষমতা হারিয়ে মাঠে অনুপস্থিত আওয়ামী লীগের শূন্যতায় রাজনৈতিক সমীকরণে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। দীর্ঘদিন প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ না পাওয়া দলটি ৫ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী কর্মী সম্মেলন, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।
দুই যুগের মিত্র বিএনপির সঙ্গে মতাদর্শগত পার্থক্যের জায়গা থেকে জামায়াত এখন আলাদা পথে হাঁটছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের অবস্থান ভিন্ন। ছাত্রনেতৃত্বের সূত্রপাত ঘটানো অভ্যুত্থানের কাছাকাছি অবস্থান থাকলেও, বিএনপির বিকল্প নির্বাচনী মোর্চা গঠনের চেষ্টা করছে দলটি।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিএনপি ও জামায়াতের আদর্শ ভিন্ন। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ফ্যাসিবাদ উৎখাতের লক্ষ্যে একসময় জোট হয়েছিল। এখন আমরা নিজের আদর্শ অনুযায়ী রাজনীতি করছি। তবে এর মানে এই নয় যে আমরা বিএনপির শত্রু হয়েছি।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ মল্লিক মনে করেন, “বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চেষ্টা জামায়াতের ভুল নীতি। তাদের জনসমর্থন সীমিত, যা ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাদেরই ক্ষতি হবে।”
সংগঠন বিস্তারে সক্রিয় জামায়াত
জামায়াত নেতাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির পর তাদেরই বড় দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। অংশ নিলেও গণঅভ্যুত্থান এবং দুঃশাসনের কারণে তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল তথা বিরোধী দল হওয়ার লক্ষ্যে সর্বাত্মক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত।
তৃণমূল পর্যায়ে প্রার্থী চূড়ান্ত এবং কর্মী-সমর্থক সংগ্রহে দলটি সক্রিয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এমনকি গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুরের মতো এলাকায়, যেখানে দলটির সাফল্য খুবই কম, সেখানেও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম জানান, “ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে আমাদের আদর্শ পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। এটি কোনো নির্বাচনী প্রচার নয়, বরং দলীয় আদর্শের প্রসার।”