খালাত ভাইকে নেতা বানিয়ে বাবাকে ভুলে যাচ্ছেন না তো তারেক রহমান?

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৪০ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৪০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিপন্থি প্রকৌশলীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব)-এর নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিনকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে ৩৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটিও ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

কমিটি ঘোষণার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন আহ্বায়ক শাহরিন ইসলাম তুহিন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে। তারেক রহমানের আপন খালাতো ভাই। দীর্ঘদিন মামলার কারণে প্রবাসে থাকার পর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সম্প্রতি দেশে ফেরেন তিনি।

বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকে বলছেন, তুহিনের রাজনৈতিক পদ প্রাপ্তির প্রধান কারণ তার পারিবারিক পরিচয়। জিয়া পরিবারের আত্মীয় হিসেবে তার এই পদ প্রাপ্তি দলীয় মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তারা বলছে, তুহিন কিংবা অন্য সব আত্মীয়দের সব থেকে বড় রাজনৈতিক পরিচয়ই হচ্ছে তিনি জিয়া পরিবারের নিকটতম আত্মীয়। এই লোভনীয় পরিচয় পাওয়া আর কারো ভাগ্যে আসবে না শত চেষ্টা করলেও।

অথচ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবদ্দশায় স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন। তিনি কখনোই দলীয় রাজনীতিতে আত্মীয়-স্বজনকে স্থান দেননি। অথচ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি পারিবারিক প্রভাবকে অগ্রাধিকার দিতে থাকেন, তবে বিএনপির ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

তাদের মতে, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা গত দেড় যুগে দলকে পরিবারকেন্দ্রিক করেছেন। বিএনপি যদি একই পথে হাঁটে, তবে জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও বিএনপির ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জিয়া পরিবারের নিকট আত্মীয়দের উচিত সরাসরি রাজনীতির বাইরে থেকে দলের জন্য পরামর্শদাতা ভূমিকা রাখা। এতে দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং নেতৃত্ব আরও গ্রহণযোগ্য হবে।

এ বিষয়ে, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফয়সাল কবির শুভ নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেন, বিএনপি কি সবসময় পেছনের দিকেই হাঁটতে বাধ্য? দলীয় সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী সবার এত তীব্র আহ্বানের পরেও কি দলটি তরুণ প্রজন্ম আর সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে বারবার উপেক্ষা করতেই থাকবে?

বিএনপি আসলে কোথায় বারবার ব্যর্থ হচ্ছে? উত্তরটা খুব সহজ- শক্তিশালী অনলাইন অবস্থান বা ন্যারেটিভ গড়ে তুলতে ব্যর্থতা। দুর্বল, ভঙ্গুর ও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অনলাইন কার্যক্রম আর প্রমিনেন্ট অনলাইন একটিভিস্টদের মূল্যায়ন ও ক্ষমতায়নে ব্যর্থতার কারণেই বিএনপির ভাবমূর্তি আজ ক্ষতিগ্রস্ত।

এখন মিলিয়ে নিন জাস্ট গতরাতে অনুমোদিত পাওয়া বিএনপি পন্থী গ্রাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাজীবী সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (এইবি)’–এর সদ্যঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সাথে। অনেকের কাছে বিষয়টা হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু আমার কাছে এটা গভীর হতাশার। কারণ এটি আমার পেশার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত এবং বিএনপি রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠ। কিন্তু সত্যি বলতে কী, ক্ষমতায় থাকাকালীন হোক বা বর্তমান আন্দোলনের সময়ে হোক–এই সংগঠনটির কোনো কার্যকর অবদান চোখে পড়েনি একসেপ্ট ব্যানার সহ কিছু মিছিল এবং শহীদ জিয়ার কবর জিয়ারত বরং ক্ষমতায় থাকতে এখন থেকে কিভাবে বদলি বাণিজ্য করা যাবে, সরকারি টেন্ডার পাওয়া যাবে সেগুলার জন্যে বেশি পরিচিত।

যদি কেউ জানেন এই সংগঠনটি জিয়ার লিগ্যাসি বা জাতীয়তাবাদী ইঞ্জিনিয়ারদের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে কোনো সৃজনশীল কাজ বা ইতিবাচক ন্যারেটিভ তৈরি করেছে, তবে আমি জানতে আগ্রহী। তথাকথিত জাতীয়তাবাদী ইঞ্জিনিয়ারদের এই সংগঠনের নেই কোনো ফেসবুক পেজ, নেই টুইটার অ্যাকাউন্ট, নেই ইউটিউব চ্যানেল। কিংবা এতোগুলা আহবায়ক কমিটির সদস্য কারো কোন উপসম্পাদকীয় বা শেখ হাসিনার মেগা প্রজেক্টের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে দেখেছেন? আমি দেখিনি।

মি. শাহরিন ইসলাম তুহিনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তরুণ ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে কয়জন তার নাম বা কাজের সঙ্গে পরিচিত? তিনি ম্যাডামের আত্মীয় এবং দীর্ঘদিন নির্বাসনে থেকে কয়েক মাস আগে দেশে ফিরেছেন- এটাই কি যোগ্যতার মাপকাঠি? যখন বিএনপি স্বজনপ্রীতি ও পশ্চাদমুখী রাজনীতির অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে, তখন তাকে এই কমিটির নেতৃত্বে আনা সত্যিই অদ্ভুত। তার চেয়েও উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো যে এত বড় কমিটিতে একজন নারীও নেই, অথচ তারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলছে। তরুন ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতিনিধি কোথায়? তরুন হলে তার বয়স কত?

এভাবে বিএনপি কীভাবে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ারদের আকৃষ্ট করবে? AEB অতীতে বা বর্তমানে তাদের জন্য কী উদাহরণ তৈরি করেছে? একজন অভিজ্ঞ ও নিপীড়িত নেতা হিসেবে মি. রুহুল কবির রিজভী সাহেব কীভাবে নারীশূন্য এই কমিটি অনুমোদন করলেন- তা বোঝা সত্যিই কঠিন। কেন এই শীর্ষ নেতারা বারবার জনমতকে উপেক্ষা করেন, যা দ্রুত বিএনপির বিপক্ষে চলে যাচ্ছে? বিএনপি কি কখনো এই বাজে সিদ্ধান্ত নেবার, সঠিক মানুষকে দল পরিচালনার কাজে সম্পৃক্ত না করতে পারার আত্মঘাতী চক্র থেকে বেরুতে পারবেনা?

Don't Miss

খালেদা ও তারেকের ঐতিহাসিক দিনকে স্মরণই করল না বিএনপি !

বিশেষ প্রতিবেদক । বিএনপির জন্য ২ জুলাই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন—এই দিনে ১৯৭১

কেন মধ্যবিত্তদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তারেক রহমান?

বিশেষ প্রতিনিধি । গত দেড় দশকে নানা রকম অভিযোগ, অপপ্রচার এবং নিষেধাজ্ঞার