খালেদা ও তারেকের ঐতিহাসিক দিনকে স্মরণই করল না বিএনপি !

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ ০৩:০৫ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ ০৩:০৫ অপরাহ্ণ

বিশেষ প্রতিবেদক ।

বিএনপির জন্য ২ জুলাই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন—এই দিনে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার শিশু পুত্র তারেক রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দী হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলটি এবছর, ২০২৫ সালের ২ জুলাই, এই দিনটিকে ঘিরে কোনো কর্মসূচি, আলোচনা সভা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো পোস্ট—কোনো কিছুই দেখা যায়নি দলটির পক্ষ থেকে। সর্বশেষ ২০২১ সাল এই দিনটিকে “খালেদা জিয়ার প্রথম বন্দী দিবস” হিসেবে স্মরণ করেছে, আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল বিএনপি ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির ইতিহাস ও নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও দলটি পিছিয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি পরিবারের ত্যাগ ও অবদানের বিষয়টি স্মরণ না করাটা রাজনৈতিকভাবে একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

একজন জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “বিএনপির কোনো নির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা ক্যালেন্ডার নেই এমন গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোকে ঘিরে। তাদের সিদ্ধান্তগুলো অনেকটাই এলোমেলো ও অসংগঠিত। না হলে এমন একটি ঐতিহাসিক দিন তারা একেবারে এড়িয়ে যেতে পারত না।”

তিনি আরও বলেন, “দলের দুই প্রধান নেতা, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান—দুজনই এই দিবসের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। ১৯৭১ সালের ২ জুলাই পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে একটি পরিবার বন্দী হওয়া ইতিহাসের অংশ। এটা কেবল ব্যক্তিগত ইতিহাস নয়, এটি একটি জাতীয় ইতিহাসেরও অংশ। অথচ দলটি সেটা স্মরণও করলো না, এটি হতাশাজনক।”

বিএনপির একজন মধ্যম সারির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের দলের ভেতরে সাংগঠনিকভাবে অনেক দুর্বলতা রয়েছে, যার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই সময় মতো সিদ্ধান্তের আওতায় আসে না। এ ধরনের দিবসগুলো আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় এবং ইতিহাসের অংশ। এগুলোর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে জানানো দরকার আমাদের নেত্রী ও নেতার অবদান সম্পর্কে।”

অন্যদিকে, আরেক বিশ্লেষক মনে করেন, নানা রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও মাঠ পর্যায়ে সংগঠনের দুর্বলতার কারণে বিএনপি হয়তো অনুষ্ঠান করতে পারেনি। তবে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করাই যেত। তিনি বলেন, “একটি পোস্টের জন্য বড়সড় প্রস্তুতি লাগে না। এ ধরনের পোস্ট নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে সহায়তা করতে পারত। সেখানে দলটি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”

বিএনপি’র ইতিহাস রক্ষার ব্যর্থতা নিয়ে এর আগেও বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকাও মাঝেমধ্যে দলের প্রচারে অনুপস্থিত থাকে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে তার ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার কাজটি যথাযথভাবে না করার অভিযোগ বহুদিনের। এবার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বন্দী দিবস এভাবে নিঃশব্দে চলে যাওয়ায় সেই প্রশ্ন আরও জোরালোভাবে ফিরে এসেছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, বিএনপি যদি দলীয় ইতিহাস ও নেতৃত্বের ত্যাগকে যথাযথভাবে স্মরণ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে দলীয় ভাবমূর্তি ও সাংগঠনিক ভিত্তি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। এই ধরনের উদাসীনতা দলটির রাজনৈতিক কৌশল এবং নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলবে।

এবারের ২ জুলাইয়ের নীরবতা তাই শুধুই একটি কর্মসূচি না করার ব্যর্থতা নয়, বরং দলীয় ইতিহাস, ভাবমূর্তি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিএনপির পরিকল্পনার অভাব ও সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই দেখছেন অনেক বিশ্লেষক।

Don't Miss

কেন মধ্যবিত্তদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তারেক রহমান?

বিশেষ প্রতিনিধি । গত দেড় দশকে নানা রকম অভিযোগ, অপপ্রচার এবং নিষেধাজ্ঞার

বিএনপির সাথে নির্বাচনী জোট নিয়ে যা ভাবছে এনসিপি

ডেক্স প্রতিবেদন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী