কেন মধ্যবিত্তদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তারেক রহমান?

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৩:০৪ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৩:০৪ অপরাহ্ণ

বিশেষ প্রতিনিধি ।

গত দেড় দশকে নানা রকম অভিযোগ, অপপ্রচার এবং নিষেধাজ্ঞার পরও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে গত পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তারেক রহমানের রাজনৈতিক অবস্থান, বক্তব্য এবং দিকনির্দেশনায় স্পষ্ট হয়েছে এক ধরনের পরিণত মনোভাব, যা নতুন করে আলোড়িত করছে দেশের সুশীল সমাজ ও শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে।

দীর্ঘ সময় তারেক রহমান ছিলেন রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র ও নির্দিষ্ট গণমাধ্যমের টার্গেটে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় মদদে গড়ে ওঠা অভিযোগগুলোকে একপাক্ষিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করেছেন বিশ্লেষকরা। এসব প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে শহরের একটি বড় অংশ তার সম্পর্কে দ্বিধান্বিত ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার রাজনৈতিক আচরণ, বক্তব্য এবং উদার মনোভাব অনেকের মনোভাব পাল্টে দিতে শুরু করেছে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “তারেক রহমান এখন অনেক বেশি পরিপক্ব ও সংযত। তিনি কারও প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে বরং গণতান্ত্রিক পন্থায় চলার চেষ্টা করছেন, যা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে তাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলছে।”

এ প্রসঙ্গে কথাসাহিত্যিক সম্প্রতি তার বন্ধু মহলে দেওয়া এক আড্ডায় বলেন, “এক সময় মিডিয়ার প্রচারে আমরা তারেক রহমান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পেয়েছিলাম। এখন তার কথাবার্তা, রাজনৈতিক ধৈর্য আর জাতীয় ইস্যুতে তাঁর অবস্থান দেখলে মনে হয়—তিনি অনেক পরিণত হয়েছেন। আমি তাঁর মাঝে একজন কৌশলী ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব দেখতে পাই।”

তবে শুধু শহুরে সুশীল সমাজ নয়, তৃণমূলেও তারেক রহমানের গ্রহণযোগ্যতা আগেই ছিল বলেই মত পর্যবেক্ষকদের। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, তারেক রহমানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল মাঠপর্যায়ের বহু নেতাকর্মীর। তিনি ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বছরের অনেকটা সময় কাটাতেন, যা তাকে জনগণের খুব কাছে পৌঁছে দেয়।

বরিশালের এক বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “তারেক ভাইয়ের মতো তৃণমূল ঘুরে ঘুরে কাজ করা নেতা আর দেখি নাই। উনি যখন আসতেন, মানুষ ছুটে আসত—সেই ছবি এখনও চোখে ভাসে।”

অবশ্য শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ অনেকটা কম ছিল তারেক রহমানের। সেই শূন্যতাকেই কাজে লাগিয়েছিল কিছু প্রথম সারির গণমাধ্যম—বলছেন বিশ্লেষকরা। তবে সেই ধারা এখন বদলাতে শুরু করেছে।

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার এক প্রকৌশলী বলেন, “বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য সরাসরি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মূলধারার মিডিয়া দ্বারা তৈরি নেতিবাচক ধোঁয়াশা অনেকটাই কেটে গেছে। নতুন প্রজন্মও তার রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী হচ্ছে।”

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, “তারেক রহমানকে আমরা একসময় ‘রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী’ ভাবলেও এখন দেখি, তিনি রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সংগঠক, সমন্বয়কারী এবং পরিকল্পনাকারী হয়ে উঠেছেন।”

বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে শহরের শিক্ষিত, প্রগতিশীল ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করা। কারণ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শহরাঞ্চলই অনেকাংশে বয়ান নির্ধারণ করে দিচ্ছে।

বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে ফিরে তারেক রহমান এখন নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। বিশেষ করে তরুণদের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের নানা কর্মসূচি চালু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক ইমেজে যে নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে, তা তাকে রাজনীতির একটি নতুন অধ্যায়ে নিয়ে যেতে পারে—যেখানে তিনি শুধু দলের নেতা নন, বরং একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক অংশের প্রতিনিধিত্বকারী বলেই বিবেচিত হবেন।

Don't Miss

হাওয়া ভবনে যা দেখেছেন আসিফ আকবর

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের আত্মজীবনীমূলক বই ” আকবর ফিফটি নট আউট ”

ভালো মানুষ খুঁজছেন তারেক রহমান !

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। বিন্দু পরিমাণ বিতর্কেও যাতে বিএনপিকে পড়তে না হয় তাদের