হঠাৎ কি হচ্ছে জাতীয় পার্টিতে?

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫ ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫ ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ

ফের অস্থির হয়ে উঠেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন করে বিতর্ক। দলের ভেতর একটি প্রভাবশালী অংশ তাঁর একক কর্তৃত্ব খর্ব করে বিকল্প নেতৃত্ব গড়তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে কাউন্সিলের আগে দলটিতে স্পষ্ট বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন আর নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার আশঙ্কার মধ্যেই ২৮ জুন দলীয় কাউন্সিল আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন জিএম কাদের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

কাউন্সিল স্থগিত: কারণ অভ্যন্তরীণ নাকি আনুষ্ঠানিক?

দলীয় সূত্র বলছে, চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভেন্যু হিসেবে না পাওয়াই সম্মেলন স্থগিতের কারণ বলে জানানো হয়েছে। তবে একাধিক সিনিয়র নেতা বলছেন, ভেন্যু না পেলেও কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজনের সিদ্ধান্ত ছিল। ফলে এটি কেবল অজুহাত মাত্র।

জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি চেয়ারম্যান পদ হারানোর শঙ্কায় সম্মেলন স্থগিত করেছেন। এই অভিযোগ তুলেছেন কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, যারা নিজেরাই চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

নেতৃত্ব নিয়ে মেরুকরণ

জিএম কাদের মহাসচিব হিসেবে বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অথবা কো-চেয়ারম্যান শামিম হায়দার পাটোয়ারীর নাম বিবেচনায় আনতে চান। অন্যদিকে বিরোধী অংশ চায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং রুহুল আমিন হাওলাদারকে নেতৃত্বে আনতে।

গঠনতন্ত্র নিয়েও দ্বন্দ্ব চলছে। বিশেষ করে ২০ এর ১(ক) ধারা বাতিলের দাবি উঠেছে, যার বলে চেয়ারম্যান কাউকে যেকোনো সময় বহিষ্কার করতে পারেন। সমালোচকরা বলছেন, এই ধারার অপব্যবহার করে জিএম কাদের ‘স্বৈরাচারী’ রূপ নিয়েছেন।

রওশনপন্থি অংশের সক্রিয়তা

রওশন এরশাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা এবং কাজী মামুনুর রশীদসহ একাধিক নেতা যুক্ত হয়েছেন এই বিরোধী তৎপরতায়। তাদের দাবি—তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে ’২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছিল মারাত্মক ভুল, যার দায় নিতে হবে বর্তমান নেতৃত্বকে।

কর্মসূচি ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক পতন

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দৃশ্যত রাজপথে কোনো কার্যকর কর্মসূচি দেখাতে পারেনি জাতীয় পার্টি। রমজানে ইফতার মাহফিল থেকে শুরু করে ফিলিস্তিন সংহতি মিছিলে অংশ নিতেও বাধার মুখে পড়েছে। এমনকি দলীয় কার্যালয় ও নেতাদের ওপরও হামলা হয়েছে।

রংপুরের এক জাপা নেতা মন্তব্য করেন, “এখন যা চলছে তাতে রংপুরেও আসন পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। মেয়র আন্দোলনের পরিকল্পনাও জিএম কাদেরের বাসায় হামলার পর আর এগোয়নি।”

একে অপরের অবস্থান

কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “আমরা কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিবর্তন চাই। জিএম কাদের যদি কাউকে না জানিয়ে সম্মেলন স্থগিত করেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। দলকে ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরানোই এখন মূল লক্ষ্য।”

রওশনপন্থি মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ জানান, “আমরা দাওয়াত পেয়েছি। আমাদের কিছু নেতা যুক্ত হয়েছেন ঐক্যের স্বার্থে। কিন্তু কাউন্সিল স্থগিত হলে সেই ঐক্যই হবে না।”

জিএম কাদেরপন্থি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ভেন্যু হিসেবে চীন মৈত্রী কেন্দ্র বা কাকরাইল হবে। প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।”

তবে দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।