ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের আগে ও পরের মুহূর্ত: হুমায়ুন কবিরের স্মৃতিচারণ

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ ০৩:৫৯ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ ০৩:৫৯ অপরাহ্ণ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচিত বৈঠকে প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন তার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির। কিংস্টনের বাসা থেকে একই গাড়িতে করে তারা লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে পৌঁছান। সম্প্রতি মানবজমিন-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে এই যাত্রাপথ এবং বৈঠকের তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেন হুমায়ুন কবির।

“আজ দেশের জন্য যেকোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত”: গাড়িতে আবেগঘন পরিবেশ

হুমায়ুন কবির জানান, হোটেল ডরচেস্টারে যাওয়ার পথে গাড়িতে তারেক রহমান ছিলেন বেশ নীরব এবং আবেগপ্রবণ। “তিনি খুব কম কথা বলছিলেন, তবে বলছিলেন—আজ দেশের জন্য যেকোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত তিনি।”

এই যাত্রাপথকে স্মরণীয় ও আবেগময় অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেন হুমায়ুন কবির। বলেন, “সত্যি বলতে, এই যাত্রাপথটা তারেক রহমান এবং আমাদের জন্য ছিল একেবারে ভিন্ন রকমের। এই সংক্ষিপ্ত পথটুকু যেন অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, গত ১৭ বছরের সব স্মৃতি, তার নির্যাতনের ইতিহাস, মিথ্যাচার সহ্য করার দিনগুলো যেন চোখের সামনে ভাসছে।”

তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমানও হয়তো এমন কিছু ভাবছিলেন। তখন তিনি আমাদের বলছিলেন, যাচ্ছি—দেখি গিয়ে দেশের জন্য কিছু করা যায় কি না। বলছিলেন, ‘দেশের জন্য আমার যদি কোনো বিশেষ ছাড় দিতে হয়, তাহলে যেকোনো ছাড় দেব, অসুবিধা কী?’ এ মনোভাব নিয়েই তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন।”

“এক্সাইটমেন্ট, ইমোশন, দুঃখে ভরা” — ঐতিহাসিক বৈঠকের আগের আবহ

১৩ই জুনের সেই সকালের যাত্রা সম্পর্কে হুমায়ুন বলেন, “জার্নিটা ছিল এক্সাইটমেন্ট, ইমোশন আর দুঃখে ভরা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের চোখে পানি টলমল করছিলো। মনে হচ্ছিল আল্লাহপাক তাকে আজ জাতীয় বীরের মর্যাদা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।”

“ঐতিহাসিক বৈঠক, ঐতিহাসিক ফলাফল”

লন্ডন বৈঠক নিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, “১৩ই জুনের বৈঠক যেমন ঐতিহাসিক, ঠিক তেমনি ফলাফলও বয়ে এনেছে ঐতিহাসিক। It was a good outcome for Bangladesh।”

বৈঠকের পর ফেরার পথে তারেক ছিলেন প্রফুল্ল

বৈঠক শেষে হোটেল থেকে বাসায় ফেরার পথে গাড়িতে কেমন ছিলেন তারেক রহমান—এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবির বলেন, “ফেরার যাত্রাটা ছিল ভিন্ন। বৈঠকের ফল ইতিবাচক আসায় তারেক রহমান প্রফুল্ল ছিলেন। মনে হয়েছে, তিনি জাতির জন্য একটি সুসংবাদ দিতে পেরেছেন। তখন সবারই ভালো লাগছিলো।”

নির্বাচন নিয়ে সংশয় নেই: ‘আগামী রমজানের আগেই ভোট’

তারেক-ইউনূস বৈঠকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘যদি’, ‘কিন্তু’, ‘হতে পারে’ ধরনের বার্তা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির সাফ বলেন, “একেবারেই ক্লিয়ার মেসেজ। আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন হবে। এখানে কোনো যদি- কিন্তু নেই।”

জামায়াতের অস্বস্তি নিয়ে মন্তব্য

বৈঠক নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ‘নাখোশ’—এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, “তারা যদি মনে করে তারা বাংলাদেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, তাহলে এই বৈঠক নিয়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট থাকতে পারে। আর যদি তারা বাংলাদেশের জনগণের অংশ হয়ে থাকে, তাহলে তাদের খুশি হওয়ার কথা। এটি তাদের নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমার জানা নেই বাংলাদেশে অতীতে রোজায় কোনো নির্বাচন হয়েছে কিনা। তবে বিএনপি বাংলাদেশের মানুষকে নিয়েই রাজনীতি করে। তাই মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়।”

তারেক রহমানের দেশে ফেরা: এখনো দিন-তারিখ নির্ধারিত নয়

তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন—এই প্রশ্নে হুমায়ুন কবির বলেন, “নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা হলেই তিনি ফিরবেন। তবে জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর—এ ধরনের মাস ধরে যে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তার দেশে ফেরার নির্দিষ্ট দিন বা মাস এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ২০২৫ সালেই তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন, এটা নিশ্চিত।”