ইশরাক বাড়াবাড়ি করলে সিটি নির্বাচন আগে দেওয়া হুশিয়ারি !

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ ০৩:৩৪ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ ০৩:৩৪ অপরাহ্ণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চলমান সংকট নিরসনে মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গেও একযোগে নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা করছে সরকার। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন’ শুরুর মাধ্যমে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন পরিস্থিতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ায় সরকার এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে চলমান সংকটের নিরসনে এবং স্থানীয় নির্বাচনের একটি ‘ট্রায়াল রান’ হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দুই সিটিতে ভোট আয়োজনের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে এরই মধ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে—যদি দক্ষিণ সিটির জটিলতা রোববারের মধ্যে না কাটে, তবে সোমবার বা মঙ্গলবারের মধ্যেই নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে। একই সঙ্গে বিএনপিকেও অনানুষ্ঠানিকভাবে এমন বার্তা জানানো হয়েছে।

ইশরাক হোসেনের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি বর্তমানে আন্দোলনের গতি কমিয়ে আনতে চান। গতকাল সারাদিন তিনি নিজ বাসায় ছিলেন এবং রাজপথে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের দীর্ঘসূত্রতা এবং এতে জনদুর্ভোগ বাড়ার বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। সম্মানজনকভাবে পরিস্থিতি থেকে সরে আসার একটি উপায় খুঁজছেন বলেও জানা গেছে। এই বিষয়ে তিনি নিজের শুভাকাঙ্ক্ষী ও ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক পরামর্শদাতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

এদিকে, লন্ডনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরকারের আলোচিত বৈঠকের পরও ইশরাক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় দলটির ভেতরেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাই মনে করছেন, আলোচনার প্রেক্ষিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথেই থাকা উচিত ছিল। ফলে দলের ভেতর থেকে ইশরাককে ‘আন্দোলনের লাগাম টানার’ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ১৯ আগস্ট দক্ষিণসহ ১২টি সিটির মেয়রদের বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর মেয়াদ শেষ হলে ১ জুন দক্ষিণ ও ২ জুন উত্তর সিটির মেয়াদ শেষ হয়। তবে নির্বাচন এখনো হয়নি। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিধান থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে আইনে স্পষ্টতা নেই।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সরকারের বৈঠকের পর ধারণা করা হয়েছিল, সব জটিলতা মিটে গেছে। এমনকি শপথ নিয়েই ইশরাকের আন্দোলন থেমে যাবে বলেই বিশ্বাস করেছিল সরকার। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে নগর ভবনের সামনে ইশরাকপন্থী কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি গতকালও অব্যাহত ছিল, যদিও ইশরাক নিজে উপস্থিত ছিলেন না। করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকও শেষমেশ বাতিল হয়ে যায়। ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইশরাক আন্দোলন দীর্ঘায়িত করতে আর আগ্রহী নন এবং তিনি সম্মানজনক সমাধানের পথ খুঁজছেন। তবে তার এই অবস্থানের পেছনে বিএনপির ভেতরে ক্ষোভ এবং শীর্ষ নেতাদের চাপও একটি বড় কারণ।

সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নাগরিক সেবার ব্যাঘাত এবং জনভোগান্তি বাড়তে দেওয়ার পক্ষে নয় সরকার। দক্ষিণ সিটির অচলাবস্থায় দৈনন্দিন কার্যক্রম থমকে গেছে, যা সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “চলমান সমস্যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। নাগরিক সেবা যেভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে, এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কিংবা নির্বাচন কমিশনের কাছে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্বাচনের নির্দেশনা আসেনি। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, “আমরা এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের চিঠি পাইনি।”

তবে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের আভাস মিলছে। সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, ইশরাক হোসেন যদি অবস্থান থেকে সরে না আসেন, তবে সরকার নির্বাচনের মাধ্যমেই এই সংকটের অবসান ঘটাতে চায়। এতে একদিকে নগর সেবাও সচল হবে, অন্যদিকে আন্দোলনের যুক্তিও নিষ্প্রভ হবে।

সরকার মনে করছে, ইশরাকের ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন’ ঘোষণা এবং কর্মসূচি আরও বাড়তে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে পড়তে পারে। ফলে শিগগিরই সরকার ‘কঠোর বাস্তবতায়’ একটি কার্যকর সিদ্ধান্তে যেতে প্রস্তুত। এর ফলে সংসদ নির্বাচনের আগেই ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে।