বিএনপি গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে যা দেখলেন মুজতবা খন্দকার

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫ ১১:৫৭ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫ ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার |

বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছিলেন এনটিভির জয়েন্ট নিউজ এডিটর ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মুজতবা খন্দকার। সফর শেষে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি একটি বিস্তারিত পোস্ট দিয়েছেন যেখানে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অগ্রগতি, দলগুলোর প্রতিক্রিয়া, সাংবাদিকতা পেশার পরিবর্তন এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা।

তারেক রহমান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচিত বৈঠক এবং পরবর্তী যৌথ বিবৃতি নিয়ে শুরুতেই মন্তব্য করেন মুজতবা খন্দকার। তিনি লেখেন—

“তারেক রহমানের সাথে প্রফেসর ইউনূসের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে জামায়াত, এনসিপির গোস্সার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসাটা আমি বেশ উপভোগ করেছি। জামায়াত ও এনসিপি এই বৈঠককে স্বাগত জানালেও যৌথ বিবৃতিটা নাকি তাদের ভালো লাগেনি। বিষয়টা কৌতূহলোদ্দীপক বইকি! আপনি বৈঠককে স্বাগত জানালেন কিন্তু বৈঠকের আউটকাম প্রকাশে আপনার আপত্তি— বিষয়টা কেমন যেন গোলমেলে হয়ে গেল না?”

তিনি মনে করেন,“বৈঠকের বিষয়টি গোপন রাখা হলে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার ডালপালা আরও বিস্তৃত হতো, আর ভিউ-ব্যবসায়ী ইউটিউবাররা নানা গল্প ফেঁদে বসতো। বরং ভালো হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে বৈঠকের নির্যাস প্রকাশ করা হয়েছে। এটাই জবাবদিহিতা, এটাই স্বচ্ছতা। জামায়াত ও এনসিপির এতে সমস্যা কোথায় তা আমার বোধগম্য নয়।”

তিনি জানান,“বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছিল। এই শীর্ষ বৈঠকে একটি আপাত সমাধান পাওয়া গেছে, যা লিখিত। এতে বিএনপি অনেকটাই নির্ভার। শুধু বিএনপি নয়, যারা দেশে গণতন্ত্রহীনতার শিকার ছিলো, তারাও স্বস্তি পেয়েছে।”

ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে তার। এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন—

“মঙ্গলবার রাতে তার সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘কাল পার্টি অফিসে আসো।’ আমারও আগ্রহ ছিলো। কারণ বহুদিন গিয়েই উঠেনি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসে।”

নিজেকে “নির্বিবাদী” ও প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকা মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান—

“বহু সভা-সেমিনারে প্রতিদিনই আমন্ত্রণ পাই, যাই না। ইচ্ছে করে না। সবাই বলে এটা আমার নেতিবাচক দিক। কিন্ত আমার অভ্যাস— সবসময় নিভৃতে থাকা।”

“বুধবার দুপুরে গেলাম। এ্যানি ভাই তখন এক গাদা তরুণ সাংবাদিককে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। প্রিয় ভাজন মিডিয়া সেলের সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি আমাকে ইঙ্গিতে সামনে আসতে বললেন, আমি এ্যানি ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসলাম।”

রাজনৈতিক সাংবাদিকতার পুরোনো স্মৃতি: জলিলের ‘ট্রাম্পকার্ড’ ইন্টারভিউ

মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন—

“আমি একসময় মাঠের রিপোর্টার ছিলাম। বহু নবীন-প্রবীণ, আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিকের সাক্ষাৎকার করেছি। মনে পড়ে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ‘ট্রাম্পকার্ড’-এর কথা— ৫ মে ২০০৪।”

তিনি লেখেন—“বিএনপি সরকারকে প্রক্সিতে ফেলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জলিল। একটি নির্বাচিত সরকারকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফেলে দেওয়ার ঘোষণা— ভাবা যায়? আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছিলো এরকমই। বিএনপি জোট সরকারের তখন মাথা খারাপ। কুল-কিনারা পাচ্ছিল না।”

সেই সময়ের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন—

“আমি তখন ‘সংবাদ’-এর রিপোর্টার। বজলুর রহমান সম্পাদক। ৩ মে রাতে হঠাৎ জলিল সাহেব সংবাদ অফিসে এলেন। রিপোর্টাররা অনেকেই বাসার পথে। বজলু ভাই আমাকে ফোন করলেন— ‘একখনি অফিসে আসেন।’ আমি ফিরে গেলাম।”

“বজলু ভাই বললেন— ‘জলিল সাহেব তো মহাপরিকল্পনা নিয়ে এসেছে, আজ রাতেই জোট সরকারকে ফেলে দেবে।’ বলেই হেসে বললেন, ‘উনার ইন্টারভিউ করবেন আপনি।’ আমি বললাম, ‘আমার তো কোনো প্রস্তুতি নেই।’ তিনি টেপ রেকর্ডার হাতে দিয়ে বললেন, ‘এক্ষুনি করুন।’”

“পরে সেই ইন্টারভিউ সংবাদে লিড নিউজ হয়। জলিল বলেছিলেন— ‘আমরা সঠিক পথেই এগুচ্ছি।’ পরে প্রমাণিত হয়, ওটা আসলে ছিল ষড়যন্ত্র। বিএনপির কিছু এমপির সঙ্গে তাদের রফা হয়েছিল।”

নবীন সাংবাদিকদের দক্ষতা নিয়ে হতাশা

বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে তিনি নবীন সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার দক্ষতা নিয়েও মন্তব্য করেন—

“অনেকেরই ইন্টারভিউ নেওয়ার কলাকৌশল জানা নেই বলে মনে হলো। আমার প্রিয় স্যার ছিলেন আতাউস সামাদ। তিনি আমাকে ধমক দিয়ে, দুপুরে না খাইয়ে অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন।”

“আমি তখন তার স্বপ্নের পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক এখন’-এর স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট। প্রতি সপ্তাহে কাভার স্টোরি করতে হতো। বি. চৌধুরী রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের পর তার ইন্টারভিউ আমাকেই করতে বলেন। তিনি বললেন, ‘আমি যাবো, কিন্তু প্রশ্ন করবে তুমি।’”

সাংবাদিকতা নিয়ে চূড়ান্ত হতাশা ও প্রশ্ন

সাংবাদিকতার অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলনা করে তিনি লেখেন—

“দেশ অনেক বদলেছে। কিন্তু সাংবাদিকতা কতটা বদলেছে, সেটাই বড় প্রশ্ন। আতাউস সামাদ, এবিএম মূসা, আহমেদ হুমায়ুন, বজলুর রহমানের মত সাংবাদিকরা এখন কোথায়?”

“এখন দিকে দিকে শুধু মোজাম্মেল বাবু, নঈম নিজাম, ফারজানা রূপাদের পদধ্বনি শুনি। অভ্যুত্থান হয়েছে রাজনীতিতে— কিন্তু সাংবাদিকতায় কি কোনো অভ্যুত্থান হয়েছে?”

“গতকাল যে হাসিনাকে পুজো করতো, আজ সে ভোল পাল্টিয়ে তারেক রহমানকে দেবতা বলছে।”