ডেক্স প্রতিবেদন
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে দলের একজন নারী নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ এবং সেই সংক্রান্ত ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এবার সরব হলেন সেই নারী—নীলা ইস্রাফিল।
নিজের ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি ঘটনাটির বিস্তারিত তুলে ধরেছেন এবং নিজের জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও নির্যাতনের ইতিহাস শেয়ার করেছেন।
নীলা ইস্রাফিল লেখেন, “আমি এনসিপির সদস্যা হই বা না হই—আমি একজন যোদ্ধা।” তিনি জানান, বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং একাধিকবার রাজনৈতিক ও পারিবারিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, প্রয়াত উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের বিরুদ্ধে তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই প্রতিবাদের ফলে তাঁর বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা হয়, কারাগারে সন্তান জন্ম হয়, বিচার বিভাগ ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
নীলা বলেন, “২০২০ সালে আমার পেটের সন্তানকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। এখনো আমি দুই মেয়েকে একসাথে ঘুম পাড়াতে পারিনি।”
তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় এবং তুষারের সঙ্গে সেই সময়েই পরিচয় ঘটে। এরপর নেপাল অবস্থানকালে তুষার তাকে ফোনে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নীলার ভাষায়, “সে আমাকে বলে, ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘তোমার প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাকে আকৃষ্ট করে’। আমি সব সময় তাকে অনুরোধ করেছি, আমাদের সম্পর্ক যেন ফর্মাল থাকে।”
নীলা আরও জানান, রোজার সময় তুষার তাকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন। এরপর তুষার দাবি করেন, ডিবি তাকে ডেকেছে এবং তিনি ডিবিকে জানিয়েছেন, নীলা তার গার্লফ্রেন্ড। এই বক্তব্যে নিরাপত্তা হুমকি অনুভব করায় তিনি আলাপ রেকর্ড করেন এবং পরে মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বিষয়টি ভাগাভাগি করেন।
নীলার ভাষ্য অনুযায়ী, বিষয়টি তিনি এনসিপির ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সারোয়ার তুষার বরং তাকে সাংগঠনিকভাবে বঞ্চিত করতে থাকেন।
“সে আমাকে নারী সেল, মহানগর কমিটি এবং অন্যান্য দলীয় ইউনিট থেকে দূরে রাখতে কাজ করেছে,” অভিযোগ করেন নীলা।
ঘটনার অডিও ভাইরাল হওয়ার পর তিনি জানান, মিডিয়া ট্রায়ালে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। “আমার অপরাধ আমি ‘তুমি’ করে কথা বলি, আমি পশ্চিমা পোশাক পরি, সহজভাবে মিশি—এটাই আমার দোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে,” বলেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি পার্টির ক্ষতি চাইনি। আমি চাইনি তুষার ধ্বংস হোক। আমি চেয়েছিলাম তিনি শুদ্ধ হোন। আমি চাই, এনসিপি এমন এক জায়গা হোক যেখানে নারীরা নিরাপদ থাকবে।”
নীলা জানিয়েছেন, অডিও প্রকাশের পর তাকে নানা দিক থেকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। “আমার কোনো রিগ্রেট নেই। আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি লড়েছি। আমি সত্য বলেছি।”
তিনি বলেন, “আমি জ্বলন্ত আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে আসা এক নারী। আমি বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে একা লড়েছি।”
নিজের বক্তব্যের শেষাংশে তিনি জানান, “এই বিষয়ে এটি আমার ফাইনাল বক্তব্য। আমি আর কোনো কথা বলবো না। যা বলার, আমি তদন্ত কমিটিকে বলব।”