আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর এখনই বড় কোনো রাজনৈতিক জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। তবে পরিস্থিতি বুঝে ভবিষ্যতে বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা। আপাতত তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে তাদের লক্ষ্য গণপরিষদ নির্বাচন। তবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। এনসিপির অধিকাংশ নেতাই চান এককভাবে নির্বাচনে লড়তে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী না হলে বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ খোলা রাখছে দলটি। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা থাকলেও জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে।
৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারা দেশব্যাপী ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা শুরু করেছেন এবং স্থানীয়ভাবে সংগঠন শক্তিশালী করার কাজ চলছে। তাদের বিশ্বাস, তৃণমূলে সংগঠিত হতে পারলে এককভাবেই নির্বাচনে লড়াই করা সম্ভব হবে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা জোটের সিদ্ধান্ত নেব। আপাতত আমাদের মনোযোগ সংগঠন শক্তিশালী করার দিকে।”
এনসিপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এটা নতুন দল, এখনই বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। তবে বিএনপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে।”
সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর
২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের পর দলটি দ্রুতই সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ২১৬ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে। পাশাপাশি, ৪৩০-এর বেশি জেলা ও উপজেলা কমিটিকে কার্যকর করে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন বিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংগঠন শক্তিশালী করতে এবং জনসমর্থন বাড়াতে এনসিপি কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগামী ১০ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই ও আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক আলোচনা সভা এবং ১১ মার্চ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ইফতার আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে দলটি।
নিবন্ধনের লক্ষ্যে শর্ত পূরণের চেষ্টা
জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে হবে এনসিপিকে। এজন্য দলটি নিবন্ধন শর্ত পূরণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ইসির বিধিমালা অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয়, ১০০টির বেশি উপজেলায় দলীয় কার্যালয়, সদস্য তালিকা ও ব্যাংক হিসাবসহ বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা মার্চের মধ্যেই এসব শর্ত পূরণের চেষ্টা করছেন।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “নিবন্ধন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। দল গঠনের পরপরই আমরা সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। রোজার পর এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।”
জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে
এনসিপি এখনই কোনো দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে যাচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভবিষ্যতে বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আমরা এখনো কোনো দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করিনি। আপাতত দল গোছানোর দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংগঠন গোছানোই তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার ওপর।
নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামী নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে চাইছে। আপাতত দলটি সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করায় মনোযোগী। জোট নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা। তবে এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেই জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।