বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন যুগের ইঙ্গিত দিয়েছে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত এই দলটি বিদ্যমান সংবিধানের পরিবর্তন এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নকে তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। দলটির মতে, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর সূচনা ঘটবে।
নতুন সংবিধান প্রণয়নের আহ্বান
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালের অভ্যুত্থান সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। আমাদের লক্ষ্য একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়ন, যা সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাবনা রোধ করবে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, জনগণ শুধুমাত্র সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কারের জন্যই বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা বলছেন, নতুন সংবিধানের আওতায় এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করা হবে, যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। সেকেন্ড রিপাবলিকের রূপরেখা হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন:
- গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন: ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় শক্তিশালী করা।
- ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক সংস্কৃতি: যেখানে বিভেদ নয়, ঐক্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে।
- সামাজিক ন্যায়বিচার: দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি নির্মূল করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিশ্রুতি।
- অর্থনৈতিক ভারসাম্য: সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা।
ভবিষ্যৎ পথচলা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলে আসছে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণা কতটা বাস্তবসম্মত এবং তা বাস্তবায়নের পথ কতটা সুগম হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করা কঠিন হবে, আবার অনেকে এটিকে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছেন।
নাহিদ ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘আমাদের দেশ, আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ—সেকেন্ড রিপাবলিক কোনো অধরা স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের প্রতিজ্ঞা।’ তবে জনগণ ও রাজনৈতিক মহল কতটা এই প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করবে, তা সময়ই বলে দেবে।