আওয়ামী লীগ কি ক্ষমা চাইবে?

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৫ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৫ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক আন্দোলন ও সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, দলটির বিরুদ্ধে গণহত্যা ও দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠার পর ক্ষমা চাওয়া বা অনুশোচনা প্রকাশ করা উচিত কি না, তা নিয়ে ভেতরে-বাইরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

ক্ষমা চাওয়ার রাজনৈতিক প্রভাব

দলের শীর্ষ নেতাদের মতে, ক্ষমা চাওয়া বা অনুশোচনা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে কর্মীদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে দুর্বলতা প্রকাশ পেতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এখন চরম রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে। গণতান্ত্রিক কাঠামোর দুর্বলতা ও অতীতের নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে দলটির জনসমর্থন সংকুচিত হয়েছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, অনুশোচনা প্রকাশ করলে জনগণের মধ্যে দলের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ফিরে আসতে পারে।

তৃণমূলের ক্ষোভ ও হতাশা

আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা প্রকট হয়ে উঠেছে। তারা মনে করেন, দলের অনেক নেতা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, যার ফলে সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে।

চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকার সময় দল বিরাজনীতিকরণে ব্যস্ত ছিল। এখন পরিস্থিতির জন্য দায় স্বীকার করা উচিত, কিন্তু কেউ তা করছে না।’

রাজশাহীর এক নেতা জানান, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের জন্য কোনো নির্দেশনা দেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি, কিন্তু দল থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছি না।’

ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ক্ষমা চাওয়ার নজির খুব কম। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো বড় রাজনৈতিক দল তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি। আওয়ামী লীগও সেই ধারাবাহিকতায় রয়েছে।’

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, অতীতের ভুল স্বীকার করে জনগণের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করা দলটির জন্য জরুরি হতে পারে।

সংকট

আওয়ামী লীগ এখনো শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখছে। তবে গণহত্যার অভিযোগ, তৃণমূল পর্যায়ের হতাশা এবং জনসমর্থনের সংকট দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষমা চাওয়া বা অনুশোচনা প্রকাশ করা দলটির জন্য পুনর্গঠনের একটি কৌশল হতে পারে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। সময়ই বলে দেবে, আওয়ামী লীগ এই সংকট থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসে।