২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (ICT) চলমান রয়েছে। এই বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করে।
তদন্ত ও অভিযোগ গঠন
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (OHCHR) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২৪ সালের শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় তৎকালীন সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম ১৬টি মামলা দায়ের করেছে, যার মধ্যে চারটির তদন্ত ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে চার্জশিট গঠন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী মার্চ মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসটি) দাখিল করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তবে এটা কোনো ফাইনাল টাইমলাইন নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়াও তদন্ত রিপোর্টের মধ্যে জাতিসংঘের রিপোর্ট ন্যাচারালি অন্তর্ভুক্ত হবে বলে তিনি জানান।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও বিচার কার্যক্রম
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারত তাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে বাধ্য। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পরপরই শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে।
সাক্ষ্যগ্রহণ ও রায়
আইন অনুযায়ী, বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর ডিফেন্স আইনজীবীদের প্রস্তুতির জন্য তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়।
এই সময় অতিবাহিত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা এপ্রিল ২০২৫ থেকে শুরু হতে পারে। আইন উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেছেন যে, অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৩-৪টি মামলার রায় পাওয়া যাবে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা ও সতর্কতা
বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছে।
বিশেষ করে, কোনো ঘৃণাসূচক বা বিদ্বেষমূলক বার্তা প্রচার করে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। এতে সাক্ষীরা ভয় পেতে পারেন বা সাক্ষ্য দেওয়ার আগ্রহ হারাতে পারেন, যা সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর।
সার্বিকভাবে, শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।