শহীদ মিনার থেকে নতুন রাজনৈতিক যাত্রা ২৪ ফেব্রুয়ারি

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:০১ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:০১ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন একটি রাজনৈতিক দল। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গঠিত এই দলের আহ্বায়ক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসেবে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেনের নাম প্রায় চূড়ান্ত। এদিন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। দল গঠনের লক্ষ্যে গত দুই সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন শীর্ষ নেতারা।

নেতৃত্ব নির্বাচনে চূড়ান্ত সমঝোতা

নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে সদস্য সচিব পদ নিয়ে কিছুটা মতবিরোধ থাকলেও শেষ মুহূর্তের আলোচনায় আখতার হোসেনকে এই পদে বসানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যদিও নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর নামও আলোচনায় রয়েছে। শেষ মুহূর্তে এই পদে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির এক নেতা জানান, “নতুন দলের নেতৃত্ব নিয়ে কিছুটা মতবিরোধ থাকলেও তা সমাধান হয়েছে। আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করার বিষয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

নতুন দলের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

নতুন রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য হবে গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। বিগত গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা ছাত্রদের নিয়ে গঠিত এই দল বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। জনগণের মতামত সংগ্রহের জন্য তারা ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে, যেখানে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মতামত দিয়েছেন।

এছাড়া, দল গঠনের পর তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে লংমার্চ ও গণসমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। যদিও রমজান মাস সামনে থাকায় তা কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে।

শহিদ মিনারে দল ঘোষণার তাৎপর্য

নতুন দলের আত্মপ্রকাশের স্থান হিসেবে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার বেছে নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে এখান থেকেই সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। ফলে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণাও এখান থেকে দেওয়ার মাধ্যমে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চায় নেতারা। বিকল্প হিসেবে মানিক মিয়া এভিনিউও আলোচনায় থাকলেও শহিদ মিনারেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

দল গঠনের পেছনে বিভিন্ন গোষ্ঠীর তৎপরতা

নতুন দলের অভ্যন্তরে নেতৃত্ব নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে নাগরিক কমিটিতে থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি মধ্যপন্থি ও বামধারার নেতারাও দলের কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখছেন।

এছাড়া, তরুণ ও ছাত্রদের পাশাপাশি সুশীলসমাজ, ব্যবসায়ী, সাবেক আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের নতুন দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের ৩৩৮টি উপজেলা-থানা কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মীকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উপদেষ্টা নাহিদের পদত্যাগের সম্ভাবনা

নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম চলতি সপ্তাহেই তার পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মহলে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

নতুন রাজনৈতিক দলটি কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, সেটি এখনো অনিশ্চিত। তবে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস বিবেচনায় এটি দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরই নতুন দলের প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হবে।