‘আয়নাঘর’: কাঁঠাল গাছও সাক্ষী!

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৩ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৩ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট

বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের গোপন বন্দীশালা—যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত—সেই বন্দীশালায় সরেজমিন প্রবেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও নেত্র নিউজ-এর এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল।

১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিনি এই গোপন বন্দীশালা পরিদর্শনে যান। এর আগে ২০২২ সালে নেত্র নিউজ “আয়নাঘরের বন্দী” নামে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যেখানে অভিযোগ করা হয়, ডিজিএফআই এখানে রাজনৈতিক বিরোধী, সামরিক সদস্য, সাংবাদিক ও অন্যান্য নাগরিকদের আটক ও নির্যাতন চালায়।

তাসনিম খলিল তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, বন্দীদের বর্ণনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে তিনি এই বন্দীশালার চিহ্নিত স্থাপনাগুলো খুঁজে পান, যার মধ্যে অন্যতম ছিল নম্বর সেল। এখানে দীর্ঘ সময় বন্দী ছিলেন মোবাশ্বের হাসান, একজন খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, যিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন।

বন্দীশালার গোপন সত্য উন্মোচন

তাসনিম খলিল জানান, সেনাবাহিনীর এক সিনিয়র অফিসারের সহায়তায় তিনি বন্দীশালার ভেতরে প্রবেশ করেন এবং বিভিন্ন স্থাপনা পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বন্দীদের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাওয়া কিছু চিহ্নিত বিন্দু খুঁজে পান, যার মধ্যে রয়েছে—

• ১৯ নম্বর সেল: মোবাশ্বের হাসানের বর্ণনার সাথে হুবহু মিলে যায়। তিনি ভিডিও কলে নিশ্চিত করেন, এটি সেই সেল যেখানে তাকে আটক রাখা হয়েছিল।

• বাথরুমের অবস্থান: ১৯ নম্বর সেলের ঠিক পাশে একটি বাথরুম, যা বন্দী মোবাশ্বেরের স্মৃতির সাথে মিলে যায়।

• বিশটি সেল বিশিষ্ট করিডোর: বন্দীরা যে কাঠামোর কথা বলেছিলেন, সেটির অস্তিত্ব তিনি নিজ চোখে দেখেন।

• হাই কমোডসহ বাথরুম: আরেকজন বন্দী হাসিনুর রহমান যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, সেটিও মিলে যায়।

প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা, কিন্তু কিছু থেকেই গেছে

তবে বন্দীশালার ভেতরে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান তাসনিম খলিল। তিনি উল্লেখ করেন—

• সেলের দেয়ালে নতুন রঙ করা হয়েছে—উজ্জ্বল গোলাপি।

• সেলের মাঝখানের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে।

• বেশ কিছু দরজা ও এগজস্ট ফ্যান খুলে ফেলা হয়েছে।

তবে সব চিহ্ন মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। বন্দীদের স্মৃতিতে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কাঁঠাল গাছ, এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

তাসনিম খলিল লেখেন, “আমার বামে কয়েকটা সেল, ডানে দেয়াল আর সামনে ওই এগজস্ট ফ্যান। ফ্যান দেখতে দেখতেই বামে তাকালাম। দরজার উপরে সেলের নম্বর লেখা। এটা ১৯ নম্বর সেল। সাথে সাথে ফোনের খোঁজে আমার হাত পকেটে। মোবাশ্বেরকে একটা ভিডিও কল করতে হবে।”

‘আয়নাঘর’ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে, তবে ডিজিএফআই কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি।