নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের চিত্র উঠে এসেছে। বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর কয়েকটি ‘গোপন বন্দীশালা’ পরিদর্শন শেষে একে ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের নমুনা’ বলে আখ্যা দেন। নির্যাতনের ভয়াবহতা দেখে হতবাক প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কি আমাদেরই সমাজ? এটা অবিশ্বাস্য!’
‘আয়নাঘর’—এক বিভীষিকার নাম
গোপন বন্দীশালাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ‘আয়নাঘর’। গুম তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এটি মূলত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পরিচালিত একটি ‘নির্যাতন সেল’, যেখানে সন্দেহভাজন বা ভিন্নমতাবলম্বীদের আটকে রেখে বর্বর নির্যাতন চালানো হতো।
ড. ইউনূস আজ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল এবং র্যাব-২-এর সিপিসি-৩-এর ভেতরের সেলগুলো পরিদর্শন করেন। পরে র্যাব সদর দপ্তরের টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স সেন্টারেও যান তিনি।
বিনা অপরাধে ‘জঙ্গি’ বানানোর কৌশল
পরিদর্শন শেষে ড. ইউনূস জানান, বন্দীশালাগুলোতে মানুষকে সম্পূর্ণ মানবাধিকারবঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। অনেককে বিনা অপরাধে আটকের পর জোরপূর্বক হাতে এক্সপ্লোসিভ ধরিয়ে দিয়ে ‘জঙ্গি’ বানানো হতো। তিনি বলেন, ‘যারা সেখানে নির্যাতিত হয়েছে, তারা নিজেরাই তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছে। যা শুনলাম, তা অকল্পনীয়।’
গোপন বন্দীশালা কতগুলো? অজানা প্রশাসনের কাছেও
গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন নির্যাতনকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় পাওয়া গোপন বন্দীশালাগুলো তারই প্রমাণ। তবে এমন টর্চার সেল আসলে কতগুলো ছিল, তার সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
‘গুম কমিশনের প্রতিবেদন জাতির জন্য এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা’
ড. ইউনূস বলেছেন, ‘এমন নিষ্ঠুর বন্দীশালা চালু করে গত সরকার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে চরম অবনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। গুম তদন্ত কমিশন যে ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে এনেছে, তা আমাদের জন্য এক চরম সতর্কবার্তা।’
তিনি আশ্বাস দেন, অন্তর্বর্তী সরকার এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের নির্যাতনমূলক বন্দীশালা আর গড়ে না ওঠে, সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।