দ্য পলিটিশিয়ান রিপোর্ট :
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। তরুণদের হাত ধরে বদলে যেতে পারে দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। আগামী ২০ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন দল ঘোষণার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দলটির মূল লক্ষ্য হবে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির অবসান, গণতান্ত্রিক কাঠামোর পুনর্নির্মাণ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠা।
একটি আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক দলে রূপান্তর
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটায়নি, বরং তা নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতারা এবার নিজেদের সংগঠিত করে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে চলেছেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্যতম মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, নতুন দল হবে সম্পূর্ণ তরুণ নেতৃত্বাধীন। “আমরা চাই একটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক দল, যেখানে দীর্ঘমেয়াদে কেউ শীর্ষ পদ দখল করে রাখতে পারবে না।”
নেতৃত্ব নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা
নতুন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক করা হতে পারে, আর সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম উঠে এসেছে। তবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফ সোহেল, সামান্তা শারমিনের মতো অন্য নেতাদের নামও বিবেচনায় আছে।
কীভাবে গঠিত হবে নতুন দল?
নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, নতুন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক।
- আহ্বায়ক কমিটি: প্রথমে দেড় শতাধিক ছাত্রনেতার সমন্বয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে।
- গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব নির্বাচন: দীর্ঘমেয়াদে শীর্ষ পদে থাকার সুযোগ থাকবে না, নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নতুন নেতৃত্ব আসবে।
- ভিন্নধর্মী কাঠামো: দলটি পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি বর্জন করবে এবং নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে আসবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির এক নেতা বলেন, “আমরা প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করব না। আমরা জনগণের দাবির ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণ করব।”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের খবরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর জন্য এটি নতুন চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তরুণ নেতৃত্বের উদ্ভব প্রচলিত রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
এই রাজনৈতিক দল কতটা সফল হবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তবে একথা নিশ্চিত, দেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।