বিশেষ প্রতিনিধি ।।।
দীর্ঘদিন ধরে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের পূর্বে বঙ্গবন্ধু শব্দটি যোগ করে সংবাদ পরিবেশন করে আসছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো। তবে সম্প্রতি প্রথম আলোর একাধিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে পূর্বের মতো আর প্রথম আলো শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সাথে বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করছে না।
সম্প্রতি ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ছাত্র জনতার হামলা ও ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো যে কয়টি সংবাদ তাদের অনলাইনে প্রকাশ করছে তার একটিতেও শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সাথে বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করেন পত্রিকাটি।
যদিও গত পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরেও দেখা গেছে প্রথম আলোর একাধিক প্রতিবেদনে শেখ মুজিবের নামের পূর্বে বঙ্গবন্ধু উপাধিটি যোগ করতে।
পত্রিকাটিতে একাধিক সংবাদের শিরোনামে শেখ মুজিব লেখা হলেও ৬ ফেব্রুয়ারি মফস্বলের একটি প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুও লেখা হয়েছে।
কিন্তু ঢাকা থেকে করা রিপোর্টে এবং বিশেষ করে ৩২ নম্বরের সড়কের বাড়ির সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে একটি বারোও সম্প্রতি প্রথম আলো তাদের সংবাদে বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করেনি।
পত্রিকাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে একটি প্রোফাইল তৈরি করার রয়েছে। সেই প্রোফাইলে বা ট্যাগে ক্লিক করা হলে শেখ মুজিব সম্পর্কিত প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদগুলো প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শিত হওয়ার সেই সংবাদগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি ১৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি সংবাদেও সেখানে শুরুতেই শেখ মুজিবের নামের আগে বঙ্গবন্ধু শব্দটি ব্যবহার করেছিল প্রথম আলো।
বিশ্লেষকদের মতে, পূর্বে ঢালাওভাবে সিংহভাগ প্রতিবেদনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের পূর্বে বঙ্গবন্ধু উপাধিটি ব্যবহার করলেও বর্তমানে পত্রিকাটি নানা কারণে চাপে রয়েছে আর এই কারণেই সম্পাদকীয় নীতিতে পরিবর্তন এনে আর বঙ্গবন্ধু শব্দটি আর ব্যবহার করছে না প্রথম আলো।
প্রথম আলো ছাড়াও অন্যান্য পত্রিকাতেও শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শব্দটির খুব একটা দেখা মিলছে না। তবে আওয়ামী লীগ আমলে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের পূর্বে বঙ্গবন্ধু শব্দটি ভুলক্রমেও কখনো বাদ গেলে এ নিয়ে নানা মহল থেকে চাপের মুখে পড়তে হতো বলে জানিয়েছেন একাধিক গণমাধ্যম কর্মী। তবে এবার নিজে থেকেই উপাধিটি বাদ দিয়েছেন বলেও তারা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে সরকার কিংবা অন্য কোন মহল থেকেও কোন প্রকার নির্দেশনা কিংবা চাপ আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক গণমাধ্যমের শীর্ষ কর্তারা।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। আর এদিন পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সমাবেশে ডাকসুর পক্ষ থেকে তত্কালীন ভিপি মুজাহিদুল ইসলাস সেলিম তুমুল করতালীর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে দেয়া জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রত্যাহার করে নেন এবং ‘ডাকসু’র আজীবন সদস্য পদ বাতিল করেন।
১৯৭৩ সালের ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার পল্টন ময়দানের জনসমাবেশে গুলিতে নিহত দুইজনের লাশ সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তার বক্তব্যে বলেন,‘‘এই সমাবেশের সামনে ডাকসুর পক্ষ থেকে আমরা ঘোষণা করছি যে, বিগত ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে ডাকসু’র পক্ষ থেকে আমরা যে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিলাম ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে আজ সেই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রত্যাহার করে নিলাম।
আমরা দেশের আপামর জনসাধারণ, সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে আজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে তার বঙ্গবন্ধু বিশেষণ ব্যবহার করবেন না। একদিন ডাকসুর পক্ষ থেকে আমরা শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ আখ্যা দিয়েছিলাম। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে আবার ছাত্রের রক্তে তার হাত কলঙ্কিত করায় আমরা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে কেউ আর জাতির পিতা বলবেন না। শেখ মুজিবুর রহমানকে একদিন ডাকসু’র আজীবন সদস্যপদ দেয়া হয়েছিল। আজকের এই সমাবেশ থেকে ডাকসু’র পক্ষ থেকে আমরা ঘোষণা করছি, আজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকসু’র আজীবন সদস্যপদ বাতিল করে দেয়া হলো।’’