শিক্ষক ও লেখক আনু মুহাম্মদ তার সম্পাদিত ত্রৈমাসিক জার্নাল “ সর্বজনকথা ” এ প্রকাশিত একটি লেখায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে তার কিছু স্মৃতি তুলে ধরেছেন ।
“ জিয়া খুন, হাসিনার প্রত্যাবর্তন এবং আরেক নির্বাচন ” শিরোনামে সেই লেখায় আনু মুহাম্মদ লিখেন, ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে ‘হিজবুল বাহার’ নামের জাহাজে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে কয়েকদিনের এক সফরের আমন্ত্রণ পেলাম। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোতে যারা স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় শীর্ষস্থান লাভ করেছেন প্রধানত তাদের নিয়েই এই তিনদিনের সফরের আয়োজন ছিল।
সফরটি বেশ আকর্ষণীয় ছিল, কিন্তু ততদিনে আমার রাজনৈতিক মতাদর্শিক যে অবস্থান দাঁড়িয়েছে তাতে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ডায়েরিতে বেশ কড়া কড়া কথা লিখেছিলাম দেখলাম। যেদিন ভোরে এই জাহাজ সফরে ক্যাম্পাস থেকে রওনা দেবার কথা সেদিন বেলা করে বিভাগে যেতেই বিভাগের কার্যকরী প্রধান অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী আমাকে পাকড়াও করলেন। ঠাট্টা করে বললেন, ‘যেতে পারো নাই কেন ?
নীতিগত কারণে না ঘুম থেকে উঠতে পারো নাই সেইজন্য ?’ পরে জেনেছি এই সফরে বিপুল সমাগম হয়েছিল। এই সফরে মুগ্ধ অনেক কৃতী শিক্ষার্থী পরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে অর্থাৎ বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। একই বছর ৩০শে মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। সেদিন আমি অনিশ্চয়তার আশংকায় মানুষের অস্থির ছুটাছুটি দেখেছিলাম। এর আগে আমি পরীক্ষা শেষ হবার পর বিআইডিএস-এ গবেষণা ফেলো হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। তখন আদমজী কোর্টে ছিল বিআইডিএস অফিস ও লাইব্রেরী।
স্থান সংকুলান না হওয়ায় দিলখুশা বাণিজ্যিক এলাকায় আরেকটি ভবনের কিছু অংশ ভাড়া নেয়া হয়েছিল, সেখানেই আমি বসতাম। ওখানে বসেই জিয়া হত্যার খবর পেলাম। সাথে সাথে সব ভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে মানুষজন রাস্তায়। মানুষের ভীড়ে কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না, আমি বের হয়ে মানুষের স্রোত দেখতে দেখতে হেঁটে বাসায় ফিরলাম। এই কদিনের অস্থির সময়ে ফরহাদ মজহারের সাথে রাষ্ট্র রাজনীতির বহু বিষয়ে আলোচনা হলো।
তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় সম্ভবত বিচিত্রা অফিসে। পরে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসে আমাদের অনেক কথা হয়। তিনি সেবছর নিউইয়র্ক থেকে ফিরে এখানেই যোগ দিয়েছিলেন। ওষুধ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে আমার লেখার সূত্রেই আলোচনা শুরু হয়েছিল। মনে আছে ফরহাদ মজহার ও সাকি সেলিমার বাসায় বসেই টিভিতে জিয়ার নানা খবর, তার জানাজায় বিশাল জনসমাগম দেখেছি, কথা বলেছি।
দপ/সআ