২০২৪ সালের ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, আশ্রয় নেন ভারতে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও গোপনে একে একে দেশত্যাগ করেন। কেউ কলকাতা, কেউ দিল্লি, আবার কেউ ত্রিপুরায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। ভারতে আশ্রয় নেওয়া এই নেতাদের সংখ্যা এখন হাজারের কাছাকাছি। তবে তারা এটাকে “পলায়ন” না বলে “কৌশলগত আত্মগোপন” বলেই দাবি করছেন।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবে এটি এক ধরনের রাজনৈতিক নির্বাসন।
কতজন নেতা ভারতে আছেন ?
বিবিসি বাংলা ও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রথম সারির বা ‘ক্যাটেগরি ১’ নেতাদের অন্তত ২০০ জন বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন:
- সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী
- সংসদ সদস্য (প্রায় ৭০ জন)
- অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা
- জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সম্পাদক
- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেয়র
- আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা
এছাড়া, উপজেলা পর্যায়ের নেতা, জুনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি।
কোথায় অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা ?
ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন। বিশেষ করে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় তাদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এছাড়া, কিছু নেতা দিল্লি, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য রাজ্যেও আশ্রয় নিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক গমন: ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
কেন দেশ ছাড়লেন ?
বিবিসি বাংলাকে দেয়া বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেছেন, “অশুভ শক্তির একমাত্র লক্ষ্য আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করা। তাই আমরা কৌশলগত কারণে আত্মগোপনে আছি।”
ভবিষ্যৎ কী ?
আওয়ামী লীগের এই নির্বাসিত নেতাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। অনেকেই ভারতে স্থায়ীভাবে থাকার চেষ্টা করছেন, কেউ কেউ রাজনৈতিক পুনর্বাসনের আশায় আছেন।
শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ
আওয়ামী লীগের যেসব নেতা বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা সবাই জানিয়েছেন যে শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তবে, এর মধ্যে কেউই স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন না যে তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি দেখা হয়েছে। আত্মগোপনকারী নেতারা আরও বলেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধুমাত্র দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেই নয়, বরং বাংলাদেশে সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে দলের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই নির্বাসন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।