বিশ্ব ইতিহাসে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যেখানে জনগণের চাপ ও বিদ্রোহের মুখে নেতারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের শাসনকাল জনগণের অসন্তোষ, দুর্নীতি, কিংবা অত্যাচারের জন্য ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। নিচে পাঁচজন নেতার পালিয়ে যাওয়ার গল্প তুলে ধরা হলো:
১. হোসনি মুবারক (মিশর)
হোসনি মুবারক ১৯৮১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মিশরের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার দীর্ঘ শাসনকাল দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জন্য কুখ্যাত ছিল। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় জনগণের ব্যাপক বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ শুরু হয়। মুবারক ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এবং পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তার পতনের পর মিশরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে।
২. ইডি আমিন (উগান্ডা)
ইডি আমিন উগান্ডার স্বৈরশাসক ছিলেন এবং ১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। তার শাসনামলে প্রায় ৩ লাখ মানুষ নিহত হয় বলে ধারণা করা হয়। অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের কারণে তার শাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষ জন্ম নেয়। ১৯৭৯ সালে তানজানিয়ান বাহিনী উগান্ডায় প্রবেশ করলে ইডি আমিন পালিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি বাকী জীবন নির্বাসিত অবস্থায় কাটান।
৩. নিকোলায় চাউশেস্কু (রোমানিয়া)
নিকোলায় চাউশেস্কু ছিলেন রোমানিয়ার কমিউনিস্ট শাসক। তার শাসনামল ছিল চরম দারিদ্র্য, খাদ্য সংকট এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের জন্য কুখ্যাত। ১৯৮৯ সালে জনগণের বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করলে চাউশেস্কু পালানোর চেষ্টা করেন। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একটি সামরিক ট্রাইবুনালের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
৪. ফার্দিনান্দ মার্কোস (ফিলিপাইন)
ফার্দিনান্দ মার্কোস ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ছিলেন ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। তার শাসনামল ছিল দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য berater. ১৯৮৬ সালের পিপল পাওয়ার রেভলিউশনের মাধ্যমে জনগণ তাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে। মার্কোস পরিবার হাওয়াইয়ে পালিয়ে যায়, যেখানে তিনি পরে মৃত্যুবরণ করেন।
৫. জাইন আল-আবিদিন বেন আলি (তিউনিসিয়া)
জাইন আল-আবিদিন বেন আলি তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রপতি ছিলেন ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। তার শাসনামল ছিল দমন-পীড়ন ও দুর্নীতির জন্য কুখ্যাত। ২০১১ সালে তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের সূত্রপাত ঘটে। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বেন আলি পরিবারসহ সৌদি আরবে পালিয়ে যান। তার এই পালিয়ে যাওয়া আরব বসন্তের প্রথম বিজয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই নেতাদের পতনের গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় যে জনগণের ইচ্ছা এবং ক্ষমতার সামনে কোনো স্বৈরশাসকের টিকে থাকা সম্ভব নয়। জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে এক সময় অত্যাচারী শাসকদের বিদায় নিতে হয়।