জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের আত্মজীবনীমূলক বই ” আকবর ফিফটি নট আউট ” এ উঠে এসেছে তার জীবনের নানান গল্প। সেই বইয়ের একটি অধ্যায় থেকে জানা যায়, আসিফ আকবর তারেক রহমানকে এবং আলোচিত হাওয়া ভবনকে কিরকম দেখেছেন তার বর্ণনা ।
সেই বইয়ে লেখা হয়,জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিজয়ী হয়েছে। কিছু ইসলামিক দলকে নিয়ে তারা একটি জোট করে । চার দলীয় ঐক্যজোট । আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার জন্যই এই জোট ।
আসিফ কুমিল্লা গিয়েছেন । মাঝে-মধ্যেই কুমিল্লা যান তিনি । হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও কুমিল্লার ডাক উপেক্ষা করতে পারেন না ।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন, এমন সময় ঢাকা থেকে একটা ফোন এসেছে । ফোন করেছেন আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল । অর্থাৎ চিত্রনায়ক উজ্জ্বল ।
‘আসসালামু আলাইকুম উজ্জ্বল ভাই ।’
‘আলাইকুম আসসালাম । আসিফ তুমি কই?’
‘ভাই আমি কুমিল্লায় ।’
‘ওকে, তুমি দ্রুত ঢাকা চলে আসো । তোমাকে গান গাইতে হবে ।
‘অবশ্যই গাইব । কী গান উজ্জ্বল ভাই?’
শহীদ জিয়াকে নিয়ে একটা গান । সঙ্গে আরো গান আছে । দলীয় কাজের জন্য । উজ্জ্বল বললেন ।
কুমিল্লায় গেলে আসিফ সহজে ঢাকা ফেরেন না । কুমিল্লায় তার প্রাণ থাকে । ঢাকায় থাকে ব্যস্ত গায়ক আসিফ ।
আসিফ বললেন, “উজ্জ্বল ভাই, আমি তো কুমিল্লায় আসলে সহজে ফিরি না । কয়েকটা দিন পর ঢাকা ফিরব । এসেই গানটা গেয়ে দিব ।’
উজ্জ্বল বললেন, ‘আসিফ, পুরো ক্যাবিনেট বসে থাকে তারেক রহমানকে দেখার জন্য । আর তারেক রহমান বসে আছে তোমাকে দেখার জন্য । তোমার দুটো গান রেকর্ড করা হল আসিফের কণ্ঠে । একটা জিয়াউর রহমানের ওপর- জন্ম তোমার যুদ্ধে যাবার নেতা হবার । আরেকটা কাজী নজরুল ইসলামের রণসঙ্গীত- চল্ চল্ চল্ ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল ।পুরো সময় তারেক রহমান বসে থাকলেন । রেকর্ডিং এর আদ্যোপান্ত বিষয়ে খোঁজ নিলেন । আসিফের গায়কীর তারিফ করলেন ।
এরপর থেকেই কারণে-অকারণে বিএনপির আলোচিত হাওয়া ভবন থেকে আসিফের ডাক পড়তে লাগল । তারেক রহমান আসিফকে পছন্দ করেছেন । আসিফের মধ্যে একটা ঠোঁটকাটা স্বভাব আছে, এক ধরনের পাগলামী আছে, কিন্তু লোক নির্ভেজাল । তা ছাড়া জিয়াউর রহমান এবং জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি তার ভালোবাসা সীমাহীন।
তারেক রহমান অল্প দিনের মধ্যেই এটা টের পেলেন । আসিফকে কাছে টেনে নিলেন তিনি । তা ছাড়া তরুণদের কাছে আসিফ ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় গায়ক । তার জনপ্রিয়তার পারদ তরতর করে ওপরে উঠছে । এমন জনপ্রিয় পাবলিক ফিগার দলের জন্যও প্রয়োজন মনে করলেন তারেক রহমান ।আলোচিত হাওয়া ভবনে প্রথমদিন গিয়ে আসিফ কিছুটা অবাক হলেন ।
হাওয়া ভবনের নাম এত শুনেছেন যে এ সম্পর্কে মনের মধ্যে বিরাট কিছু কল্পনা করেছিলেন তিনি । ভেবেছিলেন সেখানে প্রাসাদ তৈরি করে রাজকার্য পরিচালনার দরবার থাকবে । সে দরবার অবশ্যই অনেক ঐশ্বর্যমণ্ডিত হবে । সেই ঐশ্বর্যের মধ্যে বসে থাকবেন তারেক রহমান ।
বস্তুত হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের কক্ষ খুবই সাধারণ। নেই দামি ফার্নিচার । দুটো টেবিল আর কর্মীদের জন্য প্লাস্টিকের চেয়ার ছাড়া চোখে পড়ার মত কিছুই না । সেফটি ট্যাংক-এর ওপর চেয়ার-টেবিল বসিয়ে অফিস করেন তারেক রহমান । আসিফ বুঝলেন, যার বাবা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ভাঙা স্যুটকেস রেখে মারা গিয়েছিলেন, তার ছেলের অফিস কক্ষ জৌলুসপূর্ণ না হওয়াই যৌক্তিক রাজনৈতিক পরিবারেরই সন্তান আসিফ। বাবা সারাজীবন মুসলীম লীগ করেছেন। এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় আছেন তিনি । কিন্তু জীবনে কখনো দল বদলাননি ।
আসিফ জিয়াউর রহমানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বিএনপির সমর্থক । এখন পুলিশ দিয়ে ধরে ঢাকা আনা হবে ।’
কাছে কি এটা ভালো লাগছে না? তুমি দ্রুত ঢাকা চলে এসো না হলে তোমাকে _আসিফ হাসলেন। বললেন, ‘ওকে, পুলিশ পাঠাতে হবে না। আমি নিজেই আসছি।’
আসিফ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থক । তার সমর্থনের কথা রাখ- ঢাকও করেন না । সাধারণত এদেশের শিল্পীরা নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ্যে আনেন না। ফ্যান-ফলোয়ার হারানোর ভয়, ক্ষমতাসীনদের থেকে সুবিধা-অসুবিধা পাওয়ার হিসাব, কিংবা নেহাত বিতর্ক এড়াতে এই কৌশল ।
আসিফ তার মতাদর্শের কথা জানাতে নিশ্চুপ থাকলেন না । প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেন তার রাজনৈতিক পছন্দের কথা । আসিফের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সমর্থন করার অন্যতম কারণ, দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ।
আসিফ যখন ক্লাস থ্রিতে পড়েন, জিয়াউর রহমান তখন কুমিল্লায় গিয়েছিলেন। খুব কাছ থেকে তাকে দেখেন আসিফ । সুদর্শন, হ্যান্ডসাম এবং মিষ্টভাষী জিয়াউর রহমানকে ভালো লেগে যায় আসিফের । এক দেখাতেই ভালো লাগা । তারপর জাতীয় শিশু একাডেমিতে পুরস্কার নিতে যখন ঢাকায় আসেন, তখন জিয়াউর রহমানের হাত থেকে চকলেট উপহার পেয়েছিলেন ।
ওই ছোট্ট বয়সের ভালো লাগা কমেনি । বড় হয়ে আস্তে আস্তে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে জেনেছেন । তার দেশপ্রেম, নেতৃত্বগুণ সম্পর্কে বিশদভাবে জানার পর জিয়াউর রহমান এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কড়া সমর্থক বনে গেছেন ।
একটি প্রামাণ্যচিত্রের জন্য গানগুলো ব্যবহৃত হবে । সদ্য সরকার গঠন করলেও দ্রুতই ঢাকায় ফিরলেন আসিফ । জানতে পারলেন, ‘আমার বাংলাদেশ’ নামের দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান আগামী নির্বাচনের জন্য এখনই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছেন । তারই অংশ হিসেবে এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ হচ্ছে । কুমিল্লা থেকে সরাসরি স্টুডিওতে গিয়ে আসিফ পৌঁছানোর পরই তারেক রহমান সেখানে উপস্থিত হন । স্টুডিও সিম্ফনি । তারেক রহমানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় হল আসিফের।