ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দলের প্রধানসহ শীর্ষ নেতারা দেশের বাইরে, আর যারা দেশে আছেন তারা আত্মগোপনে। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা ঝুলছে, গ্রেপ্তার হলে রিমান্ড অনিবার্য। ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ সংগঠন।
এমন প্রেক্ষাপটে ছয় মাসের নিরবতা ভেঙে ফের মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তাদের কর্মসূচি সফলভাবে মাঠে গড়াবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে দলটির কর্মসূচি ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছেন, দলের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এতদিন চুপ ছিল আওয়ামী লীগ। তবে ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের মুখে আর চুপ থাকা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“একটার পর একটা হত্যা-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে আমাদেরকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। আমাদের আর হাত-পা গুটিয়ে থাকার সময় নেই,” বলেন নাদেল।
১০ দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা
আওয়ামী লীগ তাদের ফেইসবুক পেইজে ১০ দফা দাবি তুলে ধরে একটি কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ অন্যতম। কর্মসূচিতে রয়েছে:
- ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রচারপত্র বিলি
- ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ
- ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল
- ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ
- ১৮ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতাল
তবে সমাবেশের সুনির্দিষ্ট স্থান ও সময় এখনও জানায়নি দলটি।
সরকারের হুঁশিয়ারি
সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না।
“বাংলাদেশে অতীতের হত্যাকাণ্ডের জন্য তাদের নেতৃত্বকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন তাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না,” বলেন তিনি।
সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও মনে করেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই।
“আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিজম চালিয়েছে এবং গণহত্যা ঘটিয়েছে, এরপর তাদের আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই,” বলেন তিনি।
সাধারণ মানুষের সমর্থনের আশা
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে অতিষ্ঠ।
“এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায় মানুষ। জনগণের স্বার্থে আমরা বাধ্য হয়েছি এই কর্মসূচি দিতে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত।
“যদি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কোনো নেতা আইন লঙ্ঘনের চেষ্টা করে, তবে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তবে আপাতত কোনো শঙ্কা দেখছি না,” বলেন তিনি।