বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন এবং বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। বিএনপির বর্তমান রাজনীতির অন্যতম প্রধান মুখ হিসেবেও তিনি পরিচিত।
শৈশব ও শিক্ষাজীবন
১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলার এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার পিতা মির্জা রুহুল আমিন একজন খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য ছিলেন। পরিবারের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলই তাকে রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও রাজনীতির প্রতি প্রবল আগ্রহ তাকে সক্রিয় রাজনীতিতে নিয়ে আসে।
রাজনীতিতে প্রবেশ ও উত্থান
১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন ফখরুল। ১৯৮৮ সালে তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রথম বড় অর্জন। এরপর ১৯৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি হন। বিএনপির সংগঠনকে জেলাভিত্তিক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি কৃষি প্রতিমন্ত্রী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
বিএনপির মহাসচিব ও নেতৃত্ব
২০১১ সালে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যু হলে মির্জা ফখরুলকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৬ সালে বিএনপির জাতীয় সম্মেলনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসচিব নির্বাচিত হন।
দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ২০১৩, ২০১৪, এবং ২০১৮ সালের রাজনৈতিক আন্দোলনে তার দৃঢ় নেতৃত্ব লক্ষ্য করা গেছে। একাধিকবার গ্রেপ্তার, মামলা, ও জেল ভোগ করেও তিনি বিএনপির আন্দোলন চালিয়ে যান।
সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জ
মির্জা ফখরুলের রাজনৈতিক জীবন নানা প্রতিকূলতা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তাকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। বিশেষ করে, ২০১৩-১৪ সালের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির সময় তিনি একাধিক মামলার সম্মুখীন হন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন আপসহীন ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দেশের রাজনৈতিক সংকট, দমন-পীড়ন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তার সুদৃঢ় অবস্থান ও নেতৃত্ব আগামী দিনে বিএনপির রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তা সময়ই বলে দেবে।