সুস্থতার পথে খালেদা জিয়া : হাসপাতাল ছাড়ার প্রস্তুতি

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩১ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩১ অপরাহ্ণ

সতেরো দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর হাসপাতাল ছাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। লন্ডনের বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাড়পত্র পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ

গত ৭ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান খালেদা জিয়া। এরপর তিনি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন, যেখানে তার চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি এবং অধ্যাপক জেনিফার ক্রস। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থেকে ধীরে ধীরে তার শারীরিক উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে তার চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। লিভার প্রতিস্থাপন করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স এবং পূর্ববর্তী চিকিৎসা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

হাসপাতাল ছাড়ার প্রস্তুতি

অধ্যাপক জাহিদ হোসেন জানান, সব পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক হলে শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল ছাড়তে পারেন খালেদা জিয়া। এরপর তিনি তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় উঠবেন এবং সেখানেই তার চিকিৎসা চলবে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেও তিনি সার্বক্ষণিক অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে থাকবেন।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “ম্যাডাম এখন সার্বিকভাবে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। তবে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স একটি বড় বিষয়। জেলখানায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে তার চিকিৎসা বিলম্বিত হয়েছে, যা সুস্থতার পথে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আরও আগে যদি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।”

চিকিৎসা পরিকল্পনা

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় লন্ডন ক্লিনিকের মেডিকেল বোর্ডের পাশাপাশি জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও যুক্ত রয়েছেন। তার শরীরের অবস্থা বিবেচনায় ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হবে। কিছু পরীক্ষার ফলাফল এখনো আসেনি, যা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। সেগুলোর ফলাফল পাওয়ার পর চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দোয়ার আহ্বান

বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে। তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা আশা করছেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি শারীরিকভাবে আরও সুস্থ হয়ে উঠবেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনেও খালেদা জিয়ার সুস্থতা নিয়ে আলোচনা চলছে। দলের নেতাকর্মীরা তার সুস্থতার জন্য নানা আয়োজন করেছেন এবং নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন।

হাসপাতাল ছাড়ার পরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তার সুস্থতা ধরে রাখাই চিকিৎসকদের মূল লক্ষ্য। বিএনপি নেত্রীকে কেন্দ্র করে দেশ ও প্রবাসের নেতাকর্মীরা আশাবাদী যে, চিকিৎসা শেষে তিনি আরও সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন।