দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা এবং আর্থিক লেনদেনের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করে। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৫৭টি আসন, তবে নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৭টি আসন পায়। বিরোধীরা এ নির্বাচনকে ‘নিশি রাতের নির্বাচন’ বলে অভিহিত করে, কারণ অনেক কেন্দ্রে ভোট আগের রাতে সম্পন্ন হওয়ার অভিযোগ উঠে।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে করা’, ব্যালট জালিয়াতি, ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার অনিয়ম, আর্থিক লেনদেন এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। এ ছাড়াও, এসব বিষয়ে দুদকে সরাসরি কিছু অভিযোগ জমা হয়েছে।
অভিযোগ তদন্তে দুদকের পদক্ষেপ
এ অভিযোগ তদন্তে দুদক পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি বিভিন্ন ভিডিও, দেশি-বিদেশি সংবাদ, এবং নির্বাচনের ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে তারা তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
নির্বাচনের অনিয়মের অভিযোগ
নির্বাচনে অনিয়মের জন্য তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ, র্যাব, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসারসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা
একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে। কমিশনের একজন সদস্য মাহবুব তালুকদার বিদায়বেলায় মন্তব্য করেন, “এ নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি।” তিনি আরও বলেন, “জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় সিটিং এমপিদের বিষয়ে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা সম্ভব হয়নি।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর দলীয় সরকারের অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা জনগণের আস্থা হারানোর কারণ হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দেন আদালত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায়। পরে হাই কোর্টের এক রায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পথ সুগম করা হয়।