যেভাবে বিএনপির রাজনীতিতে এলেন কনকচাঁপা

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৩:৪২ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৩:৪২ অপরাহ্ণ

ঢাকাই চলচ্চিত্রে তিন দশকের ক্যারিয়ারে সুরের মায়াজাল ছড়িয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সংগীতশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, ‘ছোট্ট একটা জীবন নিয়ে’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’-এর মতো বহু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে শ্রোতাদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন তিনি। জড়িয়েছেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে।

প্রথম আলোকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কনকচাঁপা বলেন, আমি মানুষের জন্য কাজ করি, সেই জায়গা থেকেও রাজনীতিতে উৎসাহ দিয়েছেন তিনি। আমার রাজনীতিতে আসা ভুল নাকি ঠিক হয়েছে, জানি না। কেউ বলেন ভুল হয়েছে, কেউ বলেন ঠিক হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি জীবন হাতে নিয়ে কাজ করেছি। আমার পেছনে একটা গাড়ি সারাক্ষণ অস্ত্র হাতে অনুসরণ করত। যেকোনো সময় আমাকে মেরেও ফেলতে পারত। অনেকগুলো মানুষ অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে, সেই অস্ত্র আবার দেখায়। আমার স্বামী ভয় পাননি।…

আসলে আমি তো রাজনীতিবিদ নই। আমি মানবসেবক। এটা আমি মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছি। আমার মা একজন সমাজসেবক। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, হাতের কাছে যা আছে, তা-ই দিয়েই মানুষকে সহযোগিতা করতেন মা। ধীরে ধীরে আমিও মানুষের জন্য কাজ করা শুরু করলাম। বৃদ্ধাশ্রম ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছি। সিলেটে দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। দেখা যায়, মাসে এক-দুই লাখ টাকা চলে যেত।শীতে এক হাজার কম্বল নিয়ে গিয়েছিলাম উত্তরাঞ্চলে, কম্বলের দাম কিন্তু কম নয়। শিল্পীর চুরির পয়সা থাকে না। এক হাজার কম্বল নিমেষেই শেষ, আমি কাঁদতে কাঁদতে ঢাকায় এসেছি। তখন আমার স্বামী বললেন, ‘তুমি দিয়ে শেষ করতে পারবে না। ৫০ কোটিও দান করতে চাইলে নিমেষেই শেষ হয়ে যাবে। তুমি একটা প্ল্যাটফর্ম থেকে কাজ করো। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কাছে যাও।’

সেখানে এমপি, মন্ত্রী হওয়ার দরকার নেই। আমার তো একটা পদ আছেই, আমি কনকচাঁপা, কণ্ঠশ্রমিক। প্রথমে আমি আওয়ামী লীগের কাছে গিয়েছিলাম। তখন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মনোনয়নের সময় তারা আমাকে অভয় দিয়ে মনোনয়নপত্র কিনতে বলেছিল। পরে দেখলাম, না। আমি হইনি। আমি খুবই লজ্জা পেলাম। পড়াশোনা কিংবা গান—সব জায়গায় প্রথম হয়েছি।তারপর চিন্তা করলাম, নিজে যতটুকু পারি কাজ করব। আমি সাধারণ একজন মানুষ। তবে উপার্জন বেশ ভালোই, নিয়মিত ট্যাক্স দিই। তাহলে আমার পয়সা কোথায় যায়? আমি মানুষের জন্য কাজ করি। তারপর দুই বছর বসে ছিলাম, আমার মতো কাজ করেছি।

পরে বিএনপি থেকে আমাকে ডেকেছিল। বিএনপিতে যোগ দিলাম। এভাবেই আসলে রাজনীতিতে আসা। একটা কথা আছে না, আমিও ফকির হলাম, দেশেও দুর্ভিক্ষ হলো। আমিও বিএনপিতে যোগ দিলাম, এমন পরিস্থিতি দাঁড়াল…। এখন যে জিনিসটা দাঁড়িয়েছে, ২০১৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে আমি অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ, রেডিওতে আমার গান বাজানো হয় না। টিভি চ্যানেলে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর—এমন গর্বের দিনে, জাতীয় দিবসগুলোতে আমি আগে নিয়মিত গান গাইতাম। এখন সেখানে আর ডাকে না।

২০১৮ সালে নির্বাচন করলাম, সিরাজগঞ্জে মোহাম্মদ নাসিম (আওয়ামী লীগ নেতা) সাহেবের বিরুদ্ধে। ওখানে আমি শূন্য ভোটে ফেল করছি। আমার ভোটটাও আমি নাসিম সাহেবকে দিয়েছি। যা-ই হোক, এভাবে আমাকে নিষিদ্ধ করেছে, এখন শুধু বিদেশে যাই, গান গাই। করোনাভাইরাস আমাকে একভাবে সহায়তা করছে। ওই সময় করোনাভাইরাস না থাকত আর দেশে অনেক শো হতো আর আমি একদম বসে থাকতাম, তাহলে মনে হয় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়তাম। করোনাভাইরাসের মধ্যে সব শিল্পীরই গানবাজনা ও চলাফেরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি চিন্তা করেছি, সবারই তো বন্ধ হয়ে গেছে। পরে এখন যখন শো ফিরে আসছে, এত দিনে এসে আমি টের পেলাম, আমি আসলে নিষিদ্ধ।

তাঁদের কাছে আমি জিজ্ঞাসা করিনি। উল্টো আরও অপমানিত হব। একটা চ্যানেলের অনুষ্ঠানে আইয়ুব বাচ্চু বাজিয়েছিলেন, আমরা গান গেয়েছি। ইউটিউবে সব শিল্পীর গান আছে, শুধু আমার গানগুলো নেই। তখন ওই অনুষ্ঠানের প্রযোজককে জিজ্ঞাসা করলাম, সরাসরি কেউ বলেন না। তিনি বলেন, ‘আপা কী কারণে যেন আপনার গানটা আপলোড করছে না।’ আমি বললাম, ‘আমাকে শুনতে দেন।’ তিনি বললেন, ‘এটা আমার অনুমতি নেই। দেখি, ওনারা কী বলেন।’ আমি বুঝেছি, আমার কারণেই শুধু আপলোড করেননি।

রাজনৈতিক প্রভাবে যে বিষয়টা হয়েছে, এটা নিয়ে আমি আসলে ভেঙে পড়ার মানুষ নই। আমার প্রাণশক্তি অনেক বেশি। আমার অনেক ধরনের কাজ আছে, যেগুলো গানের জন্য সারা জীবন করতে পারিনি। সেই কাজগুলো করি।

Don't Miss

অভিমানী নাকি কোণঠাসা ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান ?

চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের নাম আবদুল্লাহ আল নোমান। মঙ্গলবার সকালে বিএনপির ভাইস

যেই পরিস্থিতিতে ২০১২ সালে নয়া পণ্টন বিএনপি অফিসে থাকা শুরু করেন রিজভী আহমেদ

দ্য পলিটিশিয়ান ।। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ