১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনেই ১৯৩৬ সালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দেশের রাজনীতিতে এক অনন্য প্রতিভার অধিকারী এই নেতা তার কর্মময় জীবনে জাতির জন্য রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। ২০২৫ সালে তার ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ফিরে দেখি তার জীবন, সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প।
শৈশব ও প্রাথমিক জীবন
জিয়াউর রহমানের শৈশব কেটেছে সাদামাটা গ্রামীণ পরিবেশে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন স্থানীয় স্কুলে। শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের গুণাবলি শৈশব থেকেই তার মধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করে। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ভর্তি হন পাকিস্তানের একটি সামরিক অ্যাকাডেমিতে, যা তার জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
সামরিক জীবনে অবদান
জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে তার পেশাদারিত্ব ও বীরত্বের পরিচয় দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান সেনানায়ক। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে তিনি ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে নেন। মুক্তিযুদ্ধে তার নেতৃত্ব ও সাহসিকতা তাকে জাতীয় বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে।
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উত্থান
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসীন হন। তিনি ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং তার শাসনামলে দেশ পুনর্গঠন, কৃষি, শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠা
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তার নেতৃত্বে দলটি স্বল্প সময়েই জনগণের আস্থা অর্জন করে। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে এবং দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার রাজনৈতিক আদর্শ ছিল জাতীয়তাবাদ, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করে।
অবদান ও স্মরণ
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু একজন রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তার শাসনামলে গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি বিপ্লব, এবং স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে নেওয়া উদ্যোগগুলি এখনও দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে। তার অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
আজ তার জন্মবার্ষিকীতে, দেশব্যাপী দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীরা তার কর্ম ও আদর্শকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন।
জিয়াউর রহমান ছিলেন একাধিক গুণাবলির অধিকারী একজন নেতা, যার জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। তার আদর্শ ও নেতৃত্বের গুণাবলি আজও লাখো মানুষের প্রেরণার উৎস।