লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হৃদয়স্পর্শী পুনর্মিলন

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৪১ অপরাহ্ণ
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৪১ অপরাহ্ণ

দ্য পলিটিশিয়ান প্রতিবেদন:

নানা ঝড়-ঝাপটা ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর মা-ছেলের আবেগঘন পুনর্মিলন হলো লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে পৌঁছান। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

মা-ছেলের আবেগঘন মুহূর্ত
হুইলচেয়ারে করে টার্মিনালে নেওয়া হলে মাকে দেখে থমকে দাঁড়ান তারেক। মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। সাত বছরের জমানো আবেগ যেন এক মুহূর্তে উন্মুক্ত হয়ে পড়ল। পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করেন, আর চারপাশের সবাই এ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ ও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

এ সময় সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দ শামিলা রহমান সিঁথি। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এ দৃশ্যকে “ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য” বলে অভিহিত করেন।

প্রেক্ষাপট: দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার ইতিহাস
২০০৭-০৮ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তারেক রহমান। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। এর পর থেকে দেশে ফেরেননি। ২০১৭ সালে লন্ডনে মায়ের সঙ্গে তার সর্বশেষ দেখা হয়। সেবার খালেদা জিয়া নিজের পায়ে হেঁটে টার্মিনালে এসেছিলেন।

এরপর দুর্নীতি মামলায় সাজা পেয়ে ২০১৮ সালে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। ২০২০ সালে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও দুই শর্তের কারণে তিনি কার্যত বন্দি জীবন কাটান। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চাইলে বার বার প্রত্যাখ্যান করা হয়।

চিকিৎসার জন্য লন্ডন গমন
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিসসহ একাধিক জটিলতায় ভুগছেন। লন্ডনের বিখ্যাত ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়েছে, যেখানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরাও চিকিৎসা নেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

সাত বছরের অপেক্ষার অবসান
এই পুনর্মিলন শুধুই একটি পরিবারের নয়, বরং রাজনৈতিক অস্থিরতা, পারিবারিক দূরত্ব, এবং শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করার এক প্রতীক। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে মায়ের বুকে ফেরার এই মুহূর্তটি কেবল তারেক রহমানের নয়, বরং পরিবারের সকল সদস্যের জন্যই এক স্মরণীয় দিন হয়ে থাকল।