নিজস্ব প্রতিবেদক ।।।
সম্প্রতি সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের একটি লাইভ অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো জাতির সামনে উপস্থিত হন মেজর শরিফুল হক ডালিম। বহুল প্রতিক্ষীত এই লাইভে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও তার প্রেক্ষাপট , স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে শেখ মুজিবের শাসনকাল ও ভারতীয় সম্প্রসারণ নীতির প্রভাব সম্বন্ধে মেজর ডালিমকে প্রশ্ন করতে দেখা যায়।
মেজর ডালিমকে সেই সব প্রশ্নের উত্তর বেশ সাবলীলভাবে দিতেই দেখা যায়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গ উঠলে মেজর ডালিম বলেন মেজর জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।তিনি প্রথমে নিজেকে অস্থায়ী সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করলেও পরবর্তীতে ভারতের চাপে তিনি শেখ মুজিবের পক্ষে সেই ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।

তিনি আরও বলেন জিয়াউর রহমান ছিলেন ভারতের ‘চক্ষুশূল ‘ যার জন্য আওয়ামী লীগের কিংবা ভারত কখনোই তার উপর আস্থা রাখতে পারেনি । যার ফলশ্রুতিতে তাকে সেক্টর কমান্ডার থেকে সরিয়ে এনে হেডকোয়ার্টারের ডাম্ব করা এক সেফ হাউজে এনে নিষ্ক্রিয় করে রেখে দেওয়া হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে মেজর ডালিম বলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যখন তারা বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হন, তখন তিনি মেজর জিয়াকে তাদের গোপনে গঠিত সেনা পরিষদের একটি কর্মসূচি এনে দেন।
সেই কর্মসূচি তৈরী করা হয়েছিল ২৫ বছরের ক্রিয়াকালকে সামনে রেখে। এই কর্মসূচী তৈরি করা হয়েছিল বিভিন্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে। মেজর জিয়া সেই কর্মসূচী ভালোভাবে পড়ে মন্তব্য করেন বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ, আত্ননির্ভরশীল ও আমাদের সংস্কৃতির ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এর চেয়ে ভালো সংবিধান আর হতে পারে না।
উত্তরে মেজর ডালিম বললে,” তাহলে কি আপনাদের সাথে কাজ করতে রাজি আছেন। কারণ আপনিই হলেন সিনিয়র মোস্ট এবং আপনি হচ্ছেন সৎ ব্যক্তি। আমরা আপনাকেই সামনে রেখে কাজ করতে চাই। তবে আপনার সমস্যা হচ্ছে আপনি বাংলা জানেনও না, বাংলা পড়তেও জানেন না বলতেও জানেন না। আপনি সারাজীবন পাকিস্তানে বড় হয়েছেন ওখান থেকে আর্মিতে চলে গেছেন। But that’s not a problem আমরা রয়েছি আপনার গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করার জন্য। “
মেজর জিয়া সম্বন্ধে এই তথ্য প্রচারিত হওয়ার পর থেকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেজর জিয়ার স্বহস্তে লিখা দুটি চিঠির ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে যা তিনি বাংলায় লিখেছিলেন। প্রথম চিঠিটা জিয়াউর রহমান লিখেছিলেন করাচি থেকে তার মামী কাছে যখন তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।সেই চিঠিতে জিয়াউর রহমান ম্যাট্রিকুলেশনের পর তার ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন।
এরপর আরেকটি চিঠি যা তার ডায়েরির অংশবিশেষ ছিল। জিয়াউর রহমানের শিক্ষাজীবন পাকিস্তানের করাচিতে অতিবাহিত হলেও বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তার ছিল গভীর অনুরাগ। লেখক ও গবেষক মাহফুজ উল্লাহর লিখা “একজন জিয়া” গ্রন্থটির ২৪ নম্বর পৃষ্ঠাতে উল্লেখ আছে – জিয়াউর রহমান পাকিস্তানে বসেও কখনো উর্দুতে কথা বলতেন না।কেউ তার সাথে উর্দুতে কথা বললে তিনি ইংরেজিতে তার জবাব দিতেন। আমরা যে বাঙালি এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই সচেতন। এছাড়াও “প্রাগুক্ত” গ্রন্থের ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে – সেই সময় জিয়াউর রহমান ইংরেজিতে বক্তৃতা করতে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এছাড়াও বাংলা সংগীতের প্রতি জিয়াউর রহমানের গভীর অনুরাগ তার নজরুল-সংগীতের প্রতি প্রেম থেকেই প্রতীয়মান হয়।