একটা নতুন স্বপ্ন, নতুন সময়ের পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছি

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৩২ পূর্বাহ্ণ
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৩২ পূর্বাহ্ণ

প্রথম আলো: বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর গেল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হলো, অনেক পরিবর্তন হয়ে গেল…

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান: এটা সত্য। এত বড় গণ-অভ্যুত্থান। এত শহীদ, এত আহত, ঐতিহাসিক এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছি। আমরা একটা নতুন স্বপ্ন, নতুন সময়ের পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছি। ২০২৪ সালে আমাদের জন্য একটা নতুন সুযোগ ও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র, জনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী ও আহত সবার প্রতি জাতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।

প্রথম আলো: 

নতুন বছর, ২০২৫ সালে আপনার প্রত্যাশা কী?

জেনারেল ওয়াকার: ২০২৫ সালে আমরা একটা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে যেতে চাই। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি। তাহলেই গণতন্ত্র স্থায়ী হবে।
আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এখন শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। এই দুটি বিষয় না হলে উন্নয়ন আর সুশাসনও আসবে না। সে জন্য আমাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য একটা জাতীয় সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

প্রথম আলো: 

সম্প্রতি দেখছি, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ ব্রিফিং করা হচ্ছে। আপনিও কথা বলছেন।

জেনারেল ওয়াকার: আমি বিশ্বাস করি, আপনারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। তাই আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

প্রথম আলো: 

সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক বা সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সম্পর্ক—এসব বিষয় নিয়ে অতীতে অনেক কথা হয়েছে। অবিশ্বাসের জায়গা থাকলে কিন্তু সমস্যা হয়।

জেনারেল ওয়াকার: আমি যা চিন্তা করছি, সেটা যদি আপনারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তুলে ধরেন, তাহলে তো আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতেই পারি। সাধারণত সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন গণমাধ্যমে কথা বলেন না। এটা অনেক আগের রেওয়াজ। বহুদিন থেকেই এই পরিবেশ গড়ে উঠেছে।

প্রথম আলো: 

তার মানে আপনি বলছেন এটা অতীত থেকে হয়ে আসছে?

জেনারেল ওয়াকার: হ্যাঁ। এটা অতীত থেকেই হয়ে আসছে। আমরা মিডিয়ায় কথা বলার বিষয়ে দ্বিধান্বিত থাকি। তারপরও এখন দেশ একটা বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের মনে জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে। থাকতে পারে বিভ্রান্তি। আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিস ইনফরমেশন, ডিস-ইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে। সে জন্য আমাদেরও মাঝে মাঝে মিডিয়ার সামনে যেতে হচ্ছে।প্রথম আলো: 

প্রধান উপদেষ্টা সাধারণ নির্বাচনের একটা সময়সীমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন? আপনাদের তো কাজ করতে হবে।

জেনারেল ওয়াকার: দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা দিয়েছেন। সেটা ঠিক সময়। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনের রূপরেখা বাস্তবায়নে সব সহযোগিতা করব।

প্রথম আলো: 

সেনাবাহিনী সরকারের অংশ। বর্তমান অবস্থায় আপনাদের মধ্যে কোনো উৎকণ্ঠা আছে?

জেনারেল ওয়াকার: আমাদের মাঠে থাকতে হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। আমরা কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারি, তা নিয়ে একটা ধারণা দিই। দিনের শেষে আমার সেনাদেরই তো মাঠে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যেই প্রায় পাঁচ মাস ধরে তাঁরা মাঠে আছেন। যত বেশি আমাদের লোকজন মাঠে থাকবেন, তত বেশি তাঁদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। ডাকাত ধরতে গিয়ে আমার একজন কর্মকর্তা নিহত হলেন। পুলিশ যদি দ্রুত সংগঠিত হয়ে যেত, আমার কোনো উদ্বেগ থাকত না। তারা যদি সুসংগঠিত হয়ে যায়, বেসামরিক প্রশাসন যদি যথাযথ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন শুরু করে দেয়, তাহলে আমরাও আশ্বস্ত হতে পারি।

প্রথম আলো: কিন্তু এখনো তো পুলিশ পুনর্গঠিত হতে পারেনি।

জেনারেল ওয়াকার: সেটা কিছুটা ঠিক। পুলিশ পুনর্গঠিত হওয়ার জন্য কাজ চলমান। আমরা চাইব শিগগিরই সেটা ফলপ্রসূ হবে।