দ্য পলিটিশিয়ান প্রতিবেদক:
এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি, অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি এবং এর নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিলে এটি একপাক্ষিক নির্বাচনে পরিণত হয়। ফলাফল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও এই নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর অস্থিরতা এবং পরিবর্তনের সূচনা করে।
নির্বাচনের আগে থেকেই বিরোধী দলগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিএনপি দাবি করেছিল, একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি এবং তাদের সহযোগী দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র দখল, ইভিএম কারচুপির অভিযোগ, বিরোধী এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের খবর আসে। নির্বাচন কমিশন দাবি করে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তবে নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলে।
নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে।
এরপর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার পদত্যাগের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যা নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বিরোধী দলগুলোর বর্জন এবং নির্বাচনী অনিয়ম দেশের গণতন্ত্রকে আরও সংকটে ফেলে। সুজন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “২০২৪ সালের নির্বাচনের অনিয়ম এবং পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”
বিগত এক বছরে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন শুধু সরকার পরিবর্তনেই ভূমিকা রাখেনি, বরং জনমনে রাজনৈতিক সচেতনতার স্ফূরণ ঘটিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, নতুন নেতৃত্ব এবং অন্তর্বর্তী সরকার কিভাবে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করে।
২০২৪ সালের নির্বাচন এবং এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ শুধু একটি বছরের নয়; এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।