ঢাকায় এসে থাকার জায়গা নেই তারেক রহমানের

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ

নকীব মাহমুদ ।।

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে মানেই রাজকীয় জীবনযাপন। আয়েশী প্রসাদতুল্য রম্য অট্টালিকা, বিলাশবহুল বাড়ী। এমন চিন্তাই মনে ভেসে ওঠে। বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলেদের নিয়ে এমনটাই ভাবেন পৃথিবীর লোকজন। কিন্তু যদি শোনেন একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের থাকার বাড়ি বা ঘরটিও নেই! কেমন লাগবে তখন? হুম, এমন ঘটনাই ঘটেছে পৃথিবীর ন্যানো আকৃতির দেশ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেগম খালেদা জিয়ার ছেলের ক্ষেত্রে। বলছিলাম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের কথা। 

গত  ১৫ বছর গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সভা সেমিনারে তার ব্যাপার আকাশকুসুম গালগল্প শুনিয়ে প্রজন্মের কান ভারী করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার ও তার দোসররা। শুধু তাই নয়, তারেক রহমান ও তার মা এই করেছে ওই করেছে বলে প্রচার করেছে। কিন্তু আদালত ও দুদকের তদন্তেও তেমন কোন দূর্নীতির প্রমাণ পায়নি। ফলে সম্প্রতি তারেক রহমানের নামে দায়ের হওয়া অনেক মিথ্যা মামলা এখন প্রত্যাহার হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রকাশ হয়ে গেছে, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনা পুত্র বিদেশে কাড়ি কাড়ি টাকা পাচার করেছেন। যা নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্তও শুরু করেছে দেশী বিদেশী সংস্থাগুলা। 

তবে শুনে আরও অবাক হবেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই ছেলে হলেও তারেক রহমানের ঢাকায় কোন বাড়ী বা ফ্লাট নেই। ফলে তিনি ও তার পরিবার লন্ডনে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে থাকলেও ঢাকায় কোন জমি বা ফ্লাট কেনেননি। সবশেষ তারা লন্ডন থেকে ঢাকায় আসলে কোন হোটেলে থাকবেন নাকি গুলশানের সেই ফিরোজা নামের বাসায় থাকতেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

তারেক রহমান তার বাবার পথেই হেঁটেছেন। মা দুই তিন বারের প্রধানমন্ত্রী হলেও নিজের বা পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের নামে ঢাকায় নেই কোন জমি বা একটু মাথা গোজার ঠাঁই। জিয়াউর রহমানও ছিলেন এমনই। কখনো নিজের জন্য কিছু করেননি। যতোদিন বেঁচে ছিলেন তিনি দেশ ও মানুষের জন্য করে গেছেন। ফলে তাইতো আজোও শহীদ জিয়াউর রহমানকে দেশবাসী অকুণ্ঠ চিত্তে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে কোটি কোটি মানুষ।  

দলীয় সূত্রে জানা গেছে,  এখন খালেদা জিয়া যে বাসাটিতে থাকছেন সেটিতে চারটি কক্ষ রয়েছে। একটিতে তিনি থাকেন। আরেকটি তার খাওয়া দাওয়া ও যাবতীয় জিনিসিপত্র। বাকী দুটিতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা থাকেন। এই মিলে বাসাটি পূর্ণ । এখন প্রশ্ন হলো, তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও মেয়ে যদি ঢাকায় আসেন তারা কি সেই বাসাতেই থাকবেন? সেখানে তো এই তিনজনের থাকার মতো পরিবেশও নেই। তাহলে থাকবেন কোথায়।

এই বিষয়টি ইতোমধ্যে দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকে ভাবছেন, খালেদা জিয়ার মতো তাকেও কোন বিএনপি নেতার বাসায় রাখবেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু তারেক রহমান এ বিষয়ে এখনো মত দেননি কাউকে। যদিও তারেক রহমানের গ্রামের বাড়ী বগুড়ায় তার বাবার বাড়ী রয়েছে। কিন্তু সেটি তো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

তবে এরই মধ্যে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন। তার ফেরার অংশ হিসাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি তারেক রহমানের জন্য বাড়িও খোঁজা হচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে একটি প্রতিনিধিদল নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। বিএনপির একাধিক সুত্র বলছে, যত দ্রুত সম্ভব মামলা-মোকদ্দমা থেকে মুক্ত করে তাঁকে (তারেক রহমান) বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। কোনো দিনক্ষণ নয়, বিষয়টি নির্ভর করছে আইনজীবীদের ওপর, আদালতের ওপর।

আবার দলীয় সূত্রগুলো বলেছে, তারেক রহমান ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে ফিরতে পারেন বলে দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ সার্বিক প্রস্তুতি জোরেশোরে চলছে। এমনকি তাঁর জন্য বাড়িও খোঁজা হচ্ছে।

অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ী ছিল। ছিল থাকার ঘরও। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার তা কেড়ে নেয়। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার বশিভূত হয়ে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার পরিবারের দীর্ঘ ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে টেনে হিঁচড়ে জবরদস্তি করে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন এক কাপড়ে টেনে হিঁচড়ে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে।

সেসময় বেগম জিয়া তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করলেও তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। উচ্চ আদালতে বিচার নিস্পত্তির আগেই এভাবে উচ্ছেদ করার ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। আইন-শৃঙখলা বাহিনী বেগম জিয়াকে উচ্ছেদের সময় তার মালামাল কিছুই আনতে দেয়নি। বেগম জিয়াকে জোর করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল, শটগানের গুলি ও জলকামান নিক্ষেপ করে। এতে বহু নেতাকর্মী আহত হন।

যদিও সেই বাড়ী এখন ফেরত পেতে আদালতের দারস্ত হয়েছেন বিএনপি নেতারা। উচ্ছেদ হওয়া সেনানীবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ীটির ব্যাপারে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেখা গেল তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানের মাথা গোঁজার মতো কোনো ঠাঁই নেই। পরে সংসদে আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের ওই বাড়িটি দলিলমূলে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে টোকেন মূল্যে বরাদ্দ দিয়েছিল এরশাদ সরকার। 

সেই বাড়ী থেকে উচ্ছেদ হওয়ার খালেদা জিয়া ওঠেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের বাসায়। পরে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর ’ফিরোজা’ নামের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতে শুরু করেন তিনি। তবে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর সেই বাসার ভাড়া বকেয়া পড়তে শুরু করে। এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় যে বাড়িটি তাকে হাত ছাড়া করতে হবে। এই বাড়ির মালিক ছিলেন বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর কামরুল ইসলাম।