ফাঁসির সেলে বসে তারেক রহমানকে নিয়ে যা লিখেছেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

দ্য পলিটিশিয়ান ।।

২০১৫ সালের ১১ ই এপ্রিল রাত দশটার দিকে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগে বাংলাদেশের ইতিহাস ও তার নিজের জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন ” ফাঁসির সেল থেকে বাংলাদেশ ” নামে। বইটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে প্রচ্ছদ প্রকাশনী।

সেই বইয়ের একটি অংশে তিনি বিএনপি’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে লিখেন। লেখাটি মুহাম্মদ কামরুজ্জামান ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ১:১৫ মিনিটে লিখেছিলেন। কি লিখেছিলেন কামরুজ্জামান তারেক রহমানকে নিয়ে সেটিই থাকছে এই প্রতিবেদনে ।

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান লিখেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে গ্রেফতার করার পর তার ওপর অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে তাকে দুই তলা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দিলে তিনি মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড আঘাত পান। তাকে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এদিকে তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দেওয়া হয়। চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। অনেক দিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসার পর তাদের সুপারিশে তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে বিদেশে পাঠানো হয়। তিনি রাজনীতি করবেন না বা কোনো রাজনৈতিক পদ গ্রহণ করবেন না—এই ধরনের একটি ঘোষণাও দেওয়ানো হয়। যাহোক, শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডন যান ।

এই লেখাটি যখন লিখছি (১৫ জানুয়ারি, ২০১৪) তখন পর্যন্ত তারেক রহমান লন্ডনেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর তিনি জামিন পেয়েছেন এবং হাইকোর্টের আদেশেই তা স্থগিত আছে। অবশ্য অনুসন্ধান করে তেমন কোনো প্রমাণাদি দুদক বা পুলিশ তার বিরুদ্ধে পায়নি বলেই মামলাগুলো চলছে না। তবে তারেকের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাথে একটি মানি লন্ডারিং মামলায় তাকে আসামি করা হয়। সেই মামলা দীর্ঘদিন চলার পর গত মাসে রায়ে তারেক রহমান বেকসুর খালাস পেয়েছেন। সরকারপক্ষ নিম্ন-আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি নিয়েছে এবং আপিল করেছে।


তারেক রহমানের ছোটো ভাই আরাফাত রহমানও চিকিৎসার জন্য প্যারোলে থাইল্যান্ড যান। একটি মানি লন্ডারিং মামলায় তার সাজা হয় এবং তিনি এখনও বিদেশেই আছেন। ওদিকে জিয়া ট্রাস্টের একটি মামলায় এতিমখানার ফান্ড আত্মসাৎ করার অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আরেকটা মামলা চালু আছে। তারেক রহমান নিজে কোনো সম্পদের মালিক হননি বা তার উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স বা অর্জিত অবৈধ সম্পদ নেই। ফলে তাকে মামলায় আটকিয়ে শাস্তি দেওয়া খুব সহজ হবে না। ব্যাপারটা সহজ হলে বিগত পাঁচ বছরে আওয়ামী সরকার অবশ্যই মামলাগুলো চালু করে তাকে সাজা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করত না ।


অনেক দিন নিশ্চুপ থাকার পর অতি সম্প্রতি একটি ভিডিও বার্তায় এবং একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন তারেক রহমান। সেই বক্তব্য তিনি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তার দল, ১৮ দলীয় জোট ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ায় মনে হয়, তারা তারেক রহমানের নেতৃত্বকে ভয় করে ।


এটা ঠিক যে, তারেক রহমানের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে আওয়ামী লীগ সব কিছুই করেছে। তার একটা নেতিবাচক ভাবমর্যাদা গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা তারা চালালেও সাধারণভাবে দলের মধ্যে তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। তারেক রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করলে বিএনপি চাঙা হবে, এটা নিশ্চিত বলা যায় ।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বিগত পাঁচ বছরের আকাশচুম্বী দুর্নীতি (অনেকের সম্পদ বেড়েছে আট হাজার শত ভাগ পর্যন্ত), পদ্মা সেতু দুর্নীতি, হলমার্ক, শেয়ার বাজার, রেলওয়ে, বিমান, কুইক রেন্টাল, সরকারি ব্যাংকে লুটপাট এবং এসব দুর্নীতিতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের জড়িত থাকার ফলে তারেক রহমানের দুর্নীতি সম্পর্কে যা কিছু প্রচার করা হয়েছে, তা অনেকটাই তলে পড়ে গিয়েছে। উপরন্তু সরকারি দল ও তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, চাকরি ও ঘুসবাণিজ্য, জমি দখল, বাড়ি দখল, নদী দখল, সরকারি সম্পত্তি দখল ও আত্মসাৎ ইত্যাদি দেশব্যাপী এতটাই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, বিএনপি বা চারদলীয় জোটের সময়কার দুর্নীতির কথা মানুষ ভুলেই গিয়েছে।


আওয়ামী সরকার কার্যত দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকারও করে নিয়েছে। সম্পদের হিসাব দেওয়া হবে বলে নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাদের সম্পদ এতটাই অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সম্পদের হিসাব প্রকাশে তারা সাহস করেননি। বরং সম্প্রতি পাঁচ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সময় তারা মনোনয়নপত্র জমাদানকালে সম্পদের যে হিসাব দিয়েছিলেন, তা পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর আরেক দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ নেতা মখা আলমগীর আওয়ামী প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ না করতে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ধরনা দিয়েছিলেন। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধি করার কারণে শেখ হাসিনা প্রায় ৩০ জনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে পারেননি। এরপরও বেশ কয়েকজন অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক নতুন মন্ত্রিসভাতেও স্থান পেয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগারদের পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতি তখন জাতির কাছে দৃশ্যমান ।

Don't Miss

হাওয়া ভবনে যা দেখেছেন আসিফ আকবর

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের আত্মজীবনীমূলক বই ” আকবর ফিফটি নট আউট ”

ভালো মানুষ খুঁজছেন তারেক রহমান !

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। বিন্দু পরিমাণ বিতর্কেও যাতে বিএনপিকে পড়তে না হয় তাদের