নকীব মাহমুদ ।।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান একটি আলোচিত সমালোচিত নাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একজন ছেলে হলেও নিজে অনেক সময় গাড়ি ড্রাইভ করতেন। পাশে থাকতো তার গাড়ির চালক। ছুটে যেতেন তৃণমূল মানুষের কাছে। একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করছেন পাশে তার চালক।
এমন দৃশ্য দেখে অনেকে অবাক হতেন। গাড়ি ঘিরে ধরতেন তার সমর্থকরা। তার সাথে হাত মেলানো এবং কুশল বিনিময় করতেন। পরে তাদের কাছে বসে গল্প করতেন তিনি। শুধু কি তাই একসাথে খেতেনও। এরকম হাজারো মানবীয় গুণের অধিকারী মানুষটিকে নিয়ে বিগত হাসিনা সরকার নানান কুৎসা ও অপপ্রচার চালিয়েছে। সুনামের পাল্লা ভারী হলে প্রতিপক্ষ প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়িয়েছে। ফলে গেল ১৫ বছরে নতুন প্রজন্ম বিরূপ ধারণা পেয়েছে তার সম্পর্কে।
একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের চলাফেরা বেশভূষা কেমন হতে পারে বলুন তো? তার জীবন যাত্রাই বা কেমন হতে পারে একটু কি ভেবে দেখেছেন! সে সময়ে চলমান প্রধানমন্ত্রী ছেলে হয়েও নিরহংকারী ছিলেন। পোশাক আশাক আর সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। তারেক রহমানের সেই সাদামাটা জীবনের লুকিয়ে থাকা গল্প নিয়ে থাকছে আজকের এই পর্ব।
নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানেন না তারেক রহমান সম্পর্কে। তারেক রহমানের কিছু মানবীয় গুণাবলী রয়েছে যা তিনি জন্মসূত্রে তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন। তার বাবা হলেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যিনি একাধারে সাবেক সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু বিগত ফেসিট সরকার জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। তবে কোন কাজ হয়নি। ফলশ্রুতিতে উঠতি প্রজন্ম বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে।
গল্পটা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের। যখন তার মা বাংলাদেশের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আর তিনি তখন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। এই সময়টুকুতে তারেক রহমান বাবা মায়ের গড়া রাজনৈতিক পার্টি
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে সুশৃংখলভাবে গোছাতে তৃণমূলের সফর করতে শুরু করেন। একের পর এক জনসভা, সমাবেশ, পথসভায় অংশ নিতে শুরু করেন। বাবার মতোই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। সে সময়ের মানুষ যেন তারিক রহমানের মাঝে তার বাবা জেহুর রহমানের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান।
ফলে যেখানেই তারেক রহমান যেতেন দলে দলে লোক ছুটে চলে আসতো। জেলা সফরে বের হলে অনেক সময় এই নেতা নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করতেন। চালকের পাশে বসা দেন। এমন নজির বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল। সাধারণত দেখা যায় রাজনীতিবিদরা তাদের ড্রাইভারদের সামনের আসনে বসিয়ে তারা পিছনে বসে আরাম করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো। তাদের কমান্ড করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তারেক রহমান ছিলেন ব্যতিক্রম।
শুধু কি তাই, চলতি পথে এই জনপ্রিয় নেতা ধানের ক্ষেতে কৃষক দেখলেই সড়ক বা মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে কৃষকের জন্য অপেক্ষা করতেন। কৃষকরা তার গাড়ির কাছে ছুটে এলে তাদের মলিন চেহারা আর নোংরা হাতে কোলাকুলি হ্যান্ডসেট করতেন। নিজের গাড়ি থেকে নেমে সুন্দর পোশাক পরা অবস্থায় মাঠে নেমে যেতেন। কৃষককে ধান কেটে দেখাতেন তিনি। তার এমন ব্যবহার দেখে কৃষকরা মুক্ত হয়ে যেতেন। তাদের খোঁজ খবর নিতেন। ধানের বাজার কেমন চলছে, তারা ধান আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কিনা, কৃষকের কোন সমস্যা রয়েছে কিনা নিজ মুখে শোনার চেষ্টা করতেন।
সেই সময়ের কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের কর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারিক রহমান ছিলেন কৃষক কৃষি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে তিনি তৃণমূলে সফর করলেই মাঠের কৃষকের সাথে সরাসরি কথা বলতেন। তাদের সুখ দুঃখের কথা শুনতেন। কৃষিকে আরো উন্নত কিভাবে করা যায় তা নিয়ে পরামর্শ চাইতেন সবার কাছে। এর পাশাপাশি গ্রামের মা-বোন এবং ছোট ছোট শিশুদের সাথে ও কথা বলতেন। মা বোনদের সরকারের কাছে কোন আবদার দাবি রয়েছে কিনা শুনতেন।
পাশাপাশি জেলা সফরগুলোতে গ্রামের মেঠোপথে মুরুব্বী এবং দলের বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মীদের সাথে হাত মেলাতেন। তার এমন ব্যবহার দেখে মুরুব্বিরা দুহাত তুলে দোয়াও করতেন। পরে তিনি তাদের তাদের কাছ থেকে মাঠ পর্যায়ে দলকে আরো কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় পরামর্শ চাইতেন তারেক রহমান।
তৃণমূলে তারেক রহমান ছুটে গেলে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়তো তার সাথে হাত মেলানো এবং দেখা করার জন্য। সেই সময়ের মুরুব্বিরা বলতেন তারিক রহমান একজন নিরহংকারী মানুষ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নিরহংকারী এবং মানবীয় গুণের অধিকারী আরেকজনকে পেয়েছিলেন তিনি হলেন তারেক রহমানের বাবা জিয়াউর রহমান। অধিকাংশ মানুষ মনে করে, তারেক রহমান তার বাবার অনেক গুণাবলী পেয়েছেন।
সেই সময়ে জেলাগুলোতে সেই সময়ে জনসভার ডাক দিলে দলে দলে কর্মীরা ছুটে যেতেন। তারেক রহমান আসবেন, তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন, তাকে এক নজর দেখার জন্য জনসভার মাঠগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যেত। আর মঞ্চে তিনি একবার উঠলে পুরো জনসভা কেঁপে উঠতো স্লোগানে। নেতা কর্মীদের চোখে মুখে উল্লাস ভেসে উঠতো।
শুধু এসব মানবীয় গল্পই নয়, তারেক রহমান অনেক সময় বিভিন্ন সমাবেশে নেতাকর্মীদের ভিড়ে মিশে যেতেন। তাদের কাতারে দাঁড়িয়ে দলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করতেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে সেখানে দেখে এবং তার এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হতেন। এছাড়াও তারেক রহমান সেই সময় স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গেলে দর্শকদের মতোই সাধারণ চেয়ারে বসতেন। পাশে বসাতে তার স্ত্রী, ও নেতাকর্মীদের। থাকতো না কোন প্রটোকল। কিংবা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তারেক রহমানের এসব মানবীয় গুণাবলীই সেই সময়ে কোটি কোটি মানুষের মানুষের মন জয় করেছিল।