নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি উপলক্ষে সারা দেশ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা–কর্মীরা আজ শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছিল।
সকালবেলা থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে শহীদ মিনারে জড়ো হতে দেখা যায় তাদের। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে শুরু করে জনসমাগম। দুপুর নাগাদ কানায় কানায় পুণ্য হয়ে যায় পুরো শহীদ মিনারের এলাকা। মাগরিবের আযানের পর যখন হাসনাত আব্দুল্লার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশটি শেষ হয় তখনও দোয়েল চত্বরের রাস্তা দিয়ে একাধিক মিছিলকে আসতে দেখা যায়।
এমনকি সমাবেশ শেষ হওয়ার দশ মিনিট পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশন এলাকায় আরেকটি মিছিলকে দেখা যায় সমাবেশে যোগ দিতে আসতে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কিরকম জনসমাগম হয় এটা নিয়ে ছিলো নানান জল্পনা কল্পনা। সমাবেশটি হবে কিনা এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে সোমবার মধ্যরাতে চূড়ান্ত ঘোষণা আসে, ” সমাবেশ হবেই ” । আর এ কারণেই আসতে দেরি হয় বলে জানিয়েছে একাধিক ব্যক্তি।
শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগতের সিংহভাগই ছিল ঢাকা শহরের বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। সমাবেশে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ ব্যাক্তির বয়স ১৭ থেকে ৩০ এর মধ্যে। তারা সবাই জুলাই আগস্টের আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল।
সমাবেশে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিল যারা এর আগে কখনও রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। অনেককে দেখা গেছে স্বপরিবারে আসতে। এমনকি কয়েকজন মা কেও দেখা গেছে তার কিশোর বয়সী ছেলেকে নিয়ে আসতে। আবার কোনো কিশোর এসেছে তার বাবার হাত ধরে। তরুণদের প্রায় সবাই ছিল শিক্ষার্থী। প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই এসেছিল বেশ কয়েকজন করে নারী শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদেরও উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে পুরো সমাবেশ জুড়ে। এদিকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র সম্প্রদায় থেকেও অংশ নিতে দেখা যায়।
বড় দল গুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোর সমাবেশে একটি শ্রেণীর যে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং যেটা নিয়ে সমালোচনাও হয় এরূপ কোন উপস্থিতি এখানে তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি।
মধ্যরাতের সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হান্নান ঢাকাবাসীকে তাদের এই কর্মসূচিতে গত পাঁচ আগস্ট এর মত অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কিন্তু ঢাকার অধিবাসীদের এই কর্মসূচিতে খুব একটা অংশ নিতে দেখা যায় নি। মধ্য বয়সীদের উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। মধ্যবয়সী যারা উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের অধিকাংশ এসেছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তরুণদের সাথে।
তবে, দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যেও এত বিপুল উপস্থিতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটিকে আগামীতে যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহস যোগাবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এর সাথে সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগের সেই জনসমর্থন এবং ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আর নেই বলেও মনে করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
যদিও অনেকে দাবি করছেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই কর্মসূচীটি পালন করা হয়েছে। এদিকে বিশ্লেষকদের একটি মহল মনে করেন, এই জনসমাগমটির মধ্য দিয়ে, আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে গেল। যেই বার্তাটি তাদের ষড়যন্ত্রকে দুর্বল করে দিবে।
যার সুবিধা শুধুমাত্র বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাই পাবে না বরং সব আওয়ামী লীগ বিরোধী গোষ্ঠিই উপকৃত হবে।